কলকাতা: একক বেঞ্চের নির্দেশ খারিজ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। আইএসএফের প্রতিষ্ঠাদিবসের অনুষ্ঠান ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে নয়, জানিয়ে দিল আদালত। ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। তাঁদের দলের প্রতিষ্ঠাদিবস ২১ জানুয়ারি। সেই অনুষ্ঠান এবার ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। ঠিক যেখানে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের অনুষ্ঠান হয়। পুলিশ তাতে অনুমতি না দেওয়ায় আদালতে গিয়েছিলেন নওশাদরা। কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চ বলেছিল, শর্তসাপেক্ষে ওই সভা করতে পারে আইএসএফ। এরপরই ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য। শুক্রবার সেই শুনানি হয়। সেখানেই ধাক্কা নওশাদের।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, নওশাদদের সভা ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে করা যাবে না। ভিক্টোরিয়া বাদে কাছাকাছি অন্য জায়গায় সভা হতে পারে। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের শর্ত রেখে বাকি নির্দেশ খারিজ করল ডিভিশন বেঞ্চ।
গতবছর আইএসএফের প্রতিষ্ঠাদিবসের অনুষ্ঠান হয় রানি রাসমণি রোডে। সেখানেই তুমুল গন্ডগোল হয়েছিল। এদিন সে প্রসঙ্গও ওঠে আদালতে। আগের বছর ওই অনুষ্ঠানে যে গোলমাল হয়েছিল, পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার যে ঘটনা তা অস্বীকার করা যায় না বলেই পর্যবেক্ষণ প্রধান বিচারপতির।
২১ জানুয়ারি একাধিক কর্মসূচি আছে বলে জানায় রাজ্য। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, ‘কার র্যালি সকালে। আপনারা তো সব সামলাতে পারেন। শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? আপনারা আগের বছরের কথা ভেবে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।’
নওশাদের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কি অন্য কোথাও এই সভা করতে চান?’ জবাবে নওশাদের আইনজীবী বলেন, “আমরা নিজেরা ভিডিয়োগ্রাফিও নিজেরাই করতে চাইছি। অন্য কোনও জায়গায় কেন যাব? রাজ্য ওই জায়গাতেই কেন করতে দিচ্ছে না? যেহেতু শাসকদল ওখানে সভা করে তাই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’
পাল্টা রাজ্যের হয়ে এজি কিশোর দত্ত বলেন, ‘গত বছর পাথর ছোড়ার মত ঘটনা ঘটেছে। আর এবার একদিনে অনেক সভা। ওই জায়গায় বিজেপিও সভা করেছে।’ প্রধান বিচারপতি আইএসএফের কাছে জানতে চান, ‘আপনাদের কতজন বিধায়ক আছেন? যদি কেউ এসে এমন কোনও বক্তব্য রাখেন যাতে গোলমাল হয়, সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হন, তাহলে কে দায়িত্ব নেবে?’
নেতার বক্তব্যে সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন, এমন কোনও অভিযোগ কি নওশাদের বিরুদ্ধে আছে জানতে চায় আদালত। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘এই ব্যক্তি কি আগে অভিযুক্ত হয়েছেন?’ রাজ্য জবাবে জানায়, ‘ওই বক্তা ৪৮ দিন জেলে ছিলেন।’ প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ওইদিন আরও অনুষ্ঠান আছে। ম্যারাথন আছে। সেসব অনুষ্ঠানের চেয়ে ম্যারাথন গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সচেতন না হতে পারে, কিন্তু আদালত সচেতন। মূল উদ্যোক্তা অভিযুক্ত। সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। তাই প্রধান বিচারপতির পরামর্শ, কোনও ইন্ডোরে সভা করতে পারে আইএসএফ বা অন্য কোনও জায়গায়।
এ প্রসঙ্গে নওশাদ জানান, অর্ডার কপি হাতে না পেলে কোনও মন্তব্য নয়। আদালতের নির্দেশকেই মান্যতা দেবেন বলে জানান। তবে রাজনীতি যে দীর্ঘদিনের লড়াই, তাও বিশ্বাস করেন বলে জানান নওশাদ। আগামিদিন সভা যাতে ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করতে পারেন তার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।