কলকাতা: বিধাননগর পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই নির্দেশের পরে যখন পুরনিগমের আধিকারিকরা যান, তখন পুলিশ ও পুর প্রশাসনকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। পুলিশ ও পুর আধিকারিকদের কার্যত হিমশিম খেতে হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, আজই দুপুর ১টার মধ্যে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলতে হবে। এরপর বিকেলে পুরনিগম ও পুলিশের তরফে সেই বাধার কথা জানানো হয় আদালতে। বিচারপতি পুরনিগম ও পুলিশকে আজ ফিরে যেতে বলেন এবং আগামিকাল বেলা সাড়ে দশটায় ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। আগামিকাল ওই পাঁচতলা ভবনের ১৬টি পরিবারের সদস্যদেরও আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, এদিন বিকেলে বিধাননগর পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও হাজির হয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তিনিও এদিন একপ্রস্থ ধমক খান বিচারপতির কাছে। কাউন্সিলর চামেলি নস্কর আদালতে জানান, তিনি গত বছরই সেখানকার কাউন্সিলর হয়েছেন। ওই এলাকায় প্রায় কয়েকশো বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে কোনটি আইনি এবং কোনটি বেআইনি নির্মাণ, সেটি তিনি জানেন না।
কাউন্সিলরের এই বক্তব্য শুনে বেশ বিরক্ত আদালত। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কাউন্সিলরকে ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘কাউন্সিলর হয়ে যদি আপনি না জানেন, তাহলে পদে থাকবেন না। ইস্তফা দিয়ে দিন। আপনি নিজের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ।’ কড়া ধমক দিয়ে কাউন্সিলরের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘হয় আপনি ইস্তফা দিন, নাহলে আমাকে নির্দেশ দিতে হবে। আপনি বেছে নিন।’
কাউন্সিলর অবশ্য নিজের তরফে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেন আদালতে। জানান, তিনি বেআইনি নির্মাণ রুখতে পুরনিগমকে চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চিঠির পর পুরনিগম থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি বলেই আদালতে দাবি কাউন্সিলরের। তবে কাউন্সিলরের এই যুক্তি শুনে বিচারপতির বক্তব্য, নিজের এলাকা সম্পর্কে কাউন্সিলরের খবর রাখা উচিত। ওই কাউন্সিলর নিজের দায়িত্ব সামলাতে অনুপযুক্ত বলেই মনে করছে আদালত।
কাউন্সিলরের আইনজীবীও এদিন আদালতে দুপুরের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। বলেন, “ওই বিল্ডিংয়ে ১৬টি পরিবার থাকেন। তাঁরা নির্মাণ ভাঙতে বাধা দিচ্ছেন। স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, মরতে হয় মরব, লড়াই করব! বসতবাড়ি ছাড়ব না। মহিলারা সেখানকার প্রবেশপথে শুয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।”
শুধু তাই নয়, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। পুলিশ যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রয়োজনে ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। আজকের পরিস্থিতি শোনার পর বিচারপতি বলেন, “উৎসবের মরশুমে হয়ত পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীকে ডাকা হোক। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে নির্দেশ দিতে পারি।”
কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বিল্বদ্বল ভট্টাচার্যও এদিন আদালতে অন্য একটি জনস্বার্থ মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি জানান, অতীতে ওই মামলায় রাজ্য স্বীকার করেছে ওই চত্বরে অনেক নির্মাণ হয়েছে। ওই এলাকায় জমি দেওয়া হয়েছিল উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য। কিন্তু সেখানে পাঁচতলা – ছ’তলা বিল্ডিং বেআইনিভাবে তৈরি করা হয়েছে।
সব শুনে এদিন বিচারপতি ওই ১৬টি পরিবারের সদস্যদের আগামিকাল আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই পরিবাররা চাইলে আইনজীবী নিয়োগ করে নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারবে বলেও জানিয়েছেন বিচারপতি।