কলকাতা : হাঁসখালি-কাণ্ডে কিশোরীর ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে ধর্ষণ বলা যায় কি না, তা নিয়ে সোমবার প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই মামলার তদন্তভার দেওয়া হল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে। মঙ্গলবার সকালেই ওই মামলার শুনানি হয়। রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। অবিলম্বে ওই মামলা সংক্রান্ত নথি সিবিআই আধিকারিকদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশকে। পাশাপাশি পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। নদিয়ার হাঁসখালিতে ১৪ বছরের এক কিশোরীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। যে দিন ওই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ, সেই রাতেই মৃত্যু হয় কিশোরীর।
হাঁসখালির ঘটনার পরই তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ। তবে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত হয় এবং তদন্তে আস্থা রাখে পরিবার, স্থানীয় মানুষ ও রাজ্যের বাসিন্দারা, তাই সিবিআই-কে তদন্তভার দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশকে তদন্ত সংক্রান্ত সব রিপোর্ট অবিলম্বে সিবিআই আধিকারিকদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের সব নথি তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। যে সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদেরকেও সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে হবে। আগামী ২ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। আর সে দিন প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করতে হবে সিবিআই-কে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে হবে তদন্ত।
হাঁসখালি-কাণ্ডে ঘটনার পাঁচ দিন পর অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্তে গাফিলতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে আদালতের রায়ে। হাঁসখালি মামলার আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত এই রায়কে বড় সাফল্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, রায় দেখে বোঝা যাচ্ছে, মামলাকারীদের সব কথা শোনা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, এ দিনের শুনানিতে পুলিশকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যেখানে কিশোরীকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, সেই শ্মশানে পুলিশ গিয়েছিল কি না, কিন্তু পুলিশ কোনও সদুত্তর দিতে পারে নি।
গত সোমবার এক বন্ধুর জন্মদিনে গিয়েছিল ওই ১৪ বছরের কিশোরী। রাতে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যরা দেখেন কিশোরী মারা গিয়েছে। রাতেই তার বাড়ির কাছে একটি শ্মশানে দাহ করা হয় মৃতদেহ। এলাকারই কয়েকজন যুবক দেহ দাহ করে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কোনও ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই পুড়িয়ে ফেলা হয় দেহ।
হাঁসখালি-কাণ্ডে অভিযুক্তের বাবা একজন তৃণমূল নেতা। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলের বিরুদ্ধেই উঠেছে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, গোটা রাজ্যটাই তৃণমূল। তাই এভাবে বারবার তৃণমূলের কথা টেনে আনার প্রয়োজন নেই।
হাঁসখালির ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা মঙ্গলবার আদালতের কাছে তুলে ধরেন মামলাকারীর আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। হাঁসখালির গণধর্ষণ কাণ্ডে প্রথম প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই ঘটনাকে ধর্ষণ বলা যায়ন নাকি কিশোরী গর্ভবতী ছিল? নাকি প্রেমঘটিত কারণ রয়েছে? এই সব কথাও এ দিন উল্লেখ করা হয়েছে মামলাকারীদের তরফে।
আরও পড়ুন : Firhad Hakim: ‘তিন মেয়ের বাবা, এই ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দিই না’, রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণে মন্তব্য ফিরহাদের