কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, পিএসি (PAC) চেয়ারম্যান মামলায় বিধানসভার অধ্যক্ষের পদক্ষেপ জানাতে হবে আদালতকে। ৭ অক্টোবর তা জানাতে হবে বলে নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল। বৃহস্পতিবার রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বা এজি (AG) জানিয়ে দিলেন, পিএসি চেয়ারম্যান মামলায় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৫ নভেম্বর। সুপ্রিম কোর্টে কোন পথে মামলা এগোচ্ছে, পরবর্তী শুনানিতে তার উল্লেখও থাকবে।
বিজেপি বার বার অভিযোগ তুলেছে, প্রথা ভেঙে মুকুল রায়কে বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এ নিয়ে কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায় কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সূত্রের খবর, জনস্বার্থ মামলায় আবেদনকারী বিজেপি বিধায়ক জানতে চেয়েছেন, কী ভাবে এবং কোন যুক্তিতে মুকুল রায়কে পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হল।
বিজেপি যে ছয় বিধায়কের নামের তালিকা দিয়েছিল, সেখানে মুকুল রায়ের নাম ছিল না। তাহলে কৃষ্ণনগরের বিধায়ককে কী ভাবে বিজেপি দ্বারা মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হচ্ছে? অম্বিকা রায়ের দাবি, যে মর্মে মুকুল রায়কে চেয়ারম্যান করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। অম্বিকার বক্তব্য, সংসদীয় এবং পরিষদীয় প্রথা অনুযায়ী পিএসি চেয়ারম্যানের পদ প্রধান বিরোধী দলের প্রাপ্য। কিন্তু মুকুলকে পিএসি চেয়ারম্যান করে সেই প্রথা ভেঙেছে শাসকদল।
বিধানসভার রুল বুক-এর ৩০২ ধারা অনুযায়ী, আনুপাতিক হারে পিএসি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়। এখানে সেই বিধি মানা হয়নি বলে বিজেপি’র অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী, ১৪:৬ অনুপাতে কমিটির সদস্য নিবার্চন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ১৩:৭ অনুপাতে করা হয়েছে।
এরপরই এই মামলার শুনানি পর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিধায়ক মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান রাখা হবে কি হবে না সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ৭ অক্টোবরের মধ্যে বিধানসভার স্পিকারকে এই সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এদিকে এর ঠিক দু’দিন আগে ৫ অক্টোবর আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রতীকে একুশের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন মুকুল রায়। জয়ীও হন তিনি। তবে এরপরই তৃণমূলে ফিরে যান। এদিকে বিধানসভায় কমিটি বণ্টনের সময় দেখা যায় পিএসির চেয়ারম্যান হিসাবে মুকুল রায়ের নাম রয়েছে। এরপরই মুকুলের বিধায়ক-পদ খারিজের জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা।
পাশাপাশি তাঁকে পিএসি চেয়ারম্যান করা নিয়েও দায়ের হয় মামলা। কাগজে-কলমে তিনি বিরোধী দলনেতা। যোগ দিয়েছেন আবার তৃণমূলে। তা সত্ত্বেও বিধানসভার পিএসি চেয়ারম্যানের পদ মুকুল রায়ই পেয়েছেন। সেই নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বেশ কয়েকবার উত্তপ্ত হয়েছে এজলাস। এসবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার এজি জানিয়ে দেন, বিধানসভার অধ্যক্ষ এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। কলকাতা হাইকোর্ট মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৫ নভেম্বর।