কলকাতা: বীরভূমের আমোদপুরে ডাইনি অপবাদে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে পিটিয়ে ‘খুন’, তারপরই তিলজলায় শিশুকন্যা খুনে তন্ত্রসাধনার যোগ- গোটা বিষয়টি নিয়ে এবার নাগরিক সচেতনা বাড়াতে আবারও হাইকোর্টের দ্বারস্থ বিজ্ঞান মঞ্চ। ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’ ইস্যুতে নাগরিক মনন উন্নয়নে গাইড লাইন চেয়ে আগেই হাইকোর্টের জনস্বার্থ মামলা করেছিল বিজ্ঞান মঞ্চ। কিন্তু দীর্ঘদিন তা শুনানির জন্য ওঠেনি। রাজ্যে এক সপ্তাহেই ঘটে যাওয়া পরপর দুটি নৃশংস ঘটনাকে সামনে রেখে আবারও সেই মামলার শুনানির আবেদন করলেন মামলাকারী সব্যসাচী ভট্টাচার্য। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে সেই আবেদন জমা দেওয়ার অনুমতি মিলেছে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসেই বীরভূমের আমোদপুরে মর্মান্তিক একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ডাইনি অপবাদে এক বৃদ্ধ দম্পতিকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। কাঠগড়ায় নাম ওঠে গ্রামেরই মোড়ল ও আরও বেশ কয়েকজনের। ন’পাড়া গ্রামের মোড়ল রুবাই বেসরা ও আশপাশের আদিবাসী গ্রামের বেশ কিছু মানুষের সন্দেহ হয়েছিল, পাণ্ডু ও তাঁর স্ত্রী পার্বতী ডাইনিবিদ্যা জানেন। আর সন্দেহের বশেই মোড়ল তাঁর দলবল নিয়ে ওই দম্পতির বাড়িতে চড়াও হন। শুরু হয় অত্যাচার। অবস্থা খারাপ হলে, তাঁরা দম্পতিকে ওই অবস্থাতেই ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে ওই দম্পতির এক আত্মীয় তাঁদের বাড়িতে গিয়ে গোটা বিষয়টি দেখতে পান। ততক্ষণে আরও আশঙ্কাজনক হয়ে যায় ওই দম্পতির শারীরিক অবস্থা। তাঁদের উদ্ধার করে বোলপুর সিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁদের। এরপরের অভিযোগ আরও বড়। দেহ ময়নাতদন্তের পর অভিযুক্তরাই দ্রুত তা ট্রাক্টরে শ্মশানে নিয়ে যান। সেখানে সৎকারেরও চেষ্টা করেন। গ্রামবাসীরাই তাঁদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে।
এই ঘটনার রেশ কাটার আগেই শনিবার আরও ভয়ানক ঘটনা সামনে আসে তিলজলায়। খোদ কলকাতার বুকেই আট বছরের এক শিশুকন্যার মর্মান্তিক খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দেয় গোটা বাংলাকে। শিশুকন্যাটি যে আবাসনের বাসিন্দা, তারই এক তলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় শিশুকন্যার হাত পা বাঁধা দেহ। একটা বস্তার মধ্যে হাত পা বাঁধা অবস্থায় ছিল শিশুটির দেহ। শিশুটির মুখেও কাপড় বাঁধা ছিল। পুলিশ আগেই অনুমান করেছিল, খুনের আগে শিশুটির ওপর যৌন নির্যাতন হয়। যদিও পরিবারের তরফ থেকে কেবল খুনের অভিযোগ তোলা হচ্ছিল। ময়ানতদন্তের রিপোর্টেও উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শিশুকন্যাটির যৌনাঙ্গেও ছিল ক্ষতচিহ্ন। সারা শরীর, মাথায় স্ক্রু ড্রাইভার জাতীয় কিছু দিয়ে ফুটো করার চিহ্ন মিলেছিল। জেরায় পুলিশ জানতে পারে, এই ঘটনার নেপথ্যেও রয়েছে তন্ত্রযোগ। অভিযুক্তের কোনও সন্তান ছিল না। কোনও এক তান্ত্রিকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তিনি নাকি শিশু বলি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তদন্তে যা উঠে এসেছে, তাতে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন পুলিশ কর্তারাও।
পরপর ঘটে যাওয়া এই দুটি ঘটনায় রীতিমতো সমাজের বুকে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কীভাবে একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও ‘ডাইনি’তত্ত্ব কিংবা শিশুবলি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। সেক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনা বাড়াতে এই মামলার দ্রুত শুনানির আবেদন জানান মামলাকারী।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে মহারাষ্ট্রে ব্ল্যাক ম্যাজিক অর্থাৎ কালা জাদু, বলি প্রথার বিরুদ্ধে কড়া আইন আনা হয়। মহারাষ্ট্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৩ সালে মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা নরেন্দ্র দাভলকরের করা এই বিষয়টি আদালতে সওয়াল করেছিলেন।