কলকাতা: রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্ট। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজ্যকে। বাংলায় শান্তি রক্ষার্থে উল্লেখ্যযোগ্য পর্যবেক্ষণ প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিতে পারে রাজ্য। পাশাপাশি বাংলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্টও তলব করল বেঞ্চ। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যা ঘটেছে, তা ঘটা উচিত হয়নি।
হাওড়া-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় অশান্তির পর প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক আবেদনকারী। তাঁর মূল দাবি ছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সেনা নামাতে হবে। তাঁর আইনজীবী সুবীর স্যানাল আদালতে জানান, দোকান-বাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। তাই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছ। শক্তিপুর ও রেজিনগরের অশান্তির বিষয়টিও হাইকোর্টের নজরে আনা হয়।
আরেক আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত পার্ক সার্কাস, হাওড়ার অশান্তির খবর তুলে ধরেন। পাঁচলা, উলুবেড়িয়ার ছবি জমা দেওয়া হয়। বেথুয়াওডহরিতে রেল ভাঙচুর চলে বলে আইনজীবী এদিন আদালতে উল্লেখ করেন।
আইনজীবী বলেন, “পুলিশ পালিয়ে গেছে। পার্ক সার্কাসে হাজার হাজার লোক জমা হয়েছিল। যদি এই ঘটনা সামলাতে না পারে রাজ্য তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হোক।”
অন্য আরেক আইনজীবী সুরজিৎ নাথ মিত্র বলেন, “একটা জাতীয় সড়ক বন্ধ রয়েছে। পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। হয় তারা নোটিস করেনি অথবা চুপ করে বসেছিল। সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চায়৷ সেটা দিতে অস্বীকার করা হয়।” এই ঘটনায় কোনও এফআইআরও হয়নি বলে আইনজীবী এদিন আদালতে উল্লেখ করেন।
এনআইএ তদন্তেরও দাবি ওঠে আদালতে। এদিনের শুনানিতে কক্ষে তসলিমার পোস্ট উল্লেখ করেন সুজিত নাথ। তিনি স্মরণ করান, সেই মূহুর্তে ফোর্স নিয়োগ করা হয়। সেই রকমই যাতে এবারেও করা হয়, তার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
আইনজীবীদের বক্তব্য, ইন্টারনেট বন্ধ করে গুন্ডাদের দমন করা যায় না। আদালতের কাছে তাঁদের প্রশ্ন, এমন বিক্ষোভে রাজ্য গোয়েন্দা দফতর কী করছিল?
আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল, “নিজে পাঁচলায় ছিলাম। ঘটনার সাক্ষী। দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রী আটকে পরার পর আর্মি ডাকতে পারেন, এখানে কেন নয়? মুখ্যমন্ত্রী একজন দায়িত্ববান হয়ে বলছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যে অবরোধ করুন! এখানে নয়।”
উল্লেখ্য, এখানে বিশিষ্ট আইনজীবী আমজাদ আলি সওয়াল করেন, “সংখ্যালঘুরা শান্তিপূর্ণ জমায়েত করছেন, তাহলে তাতে অনুমতি কেন দেওয়া হচ্ছে না?” তখন প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, “যেখানে ১৪৪ ধারা জারি, সেখানে তো ১০ জন লোকেরও জমায়েতের কোনও আইনত উচিত নয়। তাহলে জমায়েত কীভাবে হবে?”
গোটা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “প্রাইভেট প্রপারটি নষ্ট হয়েছে।” তিনি এজিকে প্রশ্ন করেন, “ভিডিয়ো দেখেছেন? তাহলে দোষীদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা কোথায়? যা যা নষ্ট হয়েছে সেটা উদ্ধার কীভাবে করবেন?” তারপর রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেন প্রধান বিচারপতি।