কলকাতা: কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আজব কাণ্ড! খাস কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের বহির্বিভাগ পরিষেবায় কাটছাঁট। দিনক্ষণ দেখে কার্ডিওলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে মাত্র তিন দিন সচল ওপিডি।
চিকিৎসকেরা এককথায় স্বীকার করে নিচ্ছেন, যে কোনও টার্সিয়ারি সেন্টারে (যে সেন্টার থেকে রোগীকে অন্য কোথাও রেফার করা যায় না) কার্ডিওলজির মতো বিভাগ কিন্তু সপ্তাহে ৬ দিনই খোলা থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ হৃদরোগীর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। তাছাড়া বিভিন্ন বিভাগে যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসেন, তাঁদের হৃদরোগ জনিত কোনওরকম সমস্যা রয়েছে কিনা, সেটাও জানা অত্যন্ত জরুরি চিকিৎসকের। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁদের যদি দিনক্ষণ দেখে টার্সিয়ারি সেন্টারে পাঠাতে হয়, তাহলে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রেও কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগে দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবারও হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল ভয়ঙ্কর এক অবস্থা। অত্যন্ত সঙ্কটজনক এক রোগী এসেছেন চিকিৎসার জন্য। দ্রুত তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। তাঁকে কার্ডিওলজি বিভাগে দেখাতে চান রোগীর পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু রোগীর পরিবারকে শুনতে হয়েছে, ‘আজ নয়, আসতে হবে আগামিকাল…’ সোম, বুধ, শুক্র খোলা থাকছে হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান স্বর্ণকমল সাহা বলেন, “আমি এখনই এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। কী কী কারণে বন্ধ হয়েছে, তা খোঁজ নিচ্ছি। যদি বন্ধ হয়েই থাকে, সেটাও প্রশ্ন। এইভাবে বন্ধ হবে কেন? ব্যবস্থা আগে থেকেই নেওয়া উচিত ছিল। আমাকে কারণটা আগে জানতেই হবে। সপ্তাহে সাত দিনই যাতে এই বিভাগ খোলা রাখা যায়, সেটা আমি দেখছি। আমার যা করণীয়, আমি চেষ্টা করছি।”
স্বাস্থ্য দফতরের যাঁরা কর্তাব্যক্তি রয়েছেন, এই বিভাগের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের একাংশ, হাসপাতালের আধিকারিকরা- সকলেই মেনে নিচ্ছেন যে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে এই হাসপাতালে এমনই ব্যবস্থাপনা চলছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে যে তিন দিনের বেশি তাঁরা পরিষেবা দিতে পারবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন?
জানা যাচ্ছে, কোভিড কালে এখান থেকে অনেক কার্ডিওলজি ফ্যাকাল্টিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেগুলি পরবর্তীকালে পূরণ হয়নি। বর্তমানে মাত্র ২ জন সিনিয়র রয়েছেন এই বিভাগে। হাউজস্টাফ, আরএমও- সবাই নিয়ে যে সংখ্যা, তাতে বহির্বিভাগ ৬ দিন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ চিকিৎসকের ঘাটতি।
এখানেই প্রশ্ন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ যেখানে টার্সিয়ারি সেন্টার হিসাবে বিবেচিত হয়, সেখানে কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? এখানে প্রত্যেক রোগীই অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় আসেন। কিন্তু এই বিভাগই খোলা থাকছে সপ্তাহে তিন দিন। যা অন্য কোনও হাসপাতালে হয় না। কার্ডিওলজি বিভাগের কখনই কাটছাঁট করা সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Aparna Sen: ‘কিছু সেলেব্রেটি রয়েছেন, দেশবিরোধী আন্দোলন করেন’