কলকাতা: বিবাহ বিচ্ছেদের পর সাধারণত ভরনপোষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্বামীকে। অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর স্ত্রী’কে মাসে মাসে টাকা দিতে হয়। অন্যথায় এককালীন মোটা অঙ্কের টাকাও দেওয়া যেতে পারে। তবে, একটি মামলায় এককালীন টাকা দেওয়ার পরও মাসে মাসে ভরনপোষণের টাকা দিয়ে হচ্ছে টাকা। সেই সমস্যার সমাধান চেয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। কিন্তু আইনেই রয়েছে বিভ্রান্তি। তাই, সেই মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠাল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে চলছিল এই মামলার শুনানি।
ফৌজদারি আইনের ১২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিচ্ছেদের পর স্ত্রী’কে ভরনপোষণের জন্য টাকা দিতে হয় স্বামীকে। মামলা শেষ হওয়ার পর বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হলে সেই টাকা দিতে হয়। কিন্তু যদি এককালীন টাকা দেওয়া হয়ে গিয়ে থাকে ও তারপর ভরনপোষণের জন্য মাসে মাসে টাকা দাবি করা হয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। মামলায় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ উল্লেখ করেন, হাইকোর্টের এই সংক্রান্ত রায়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলা পাঠানো হয়েছে।
কী সেই মামলা?
২০১৫ সালের ৪ মে আলিপুর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দেয়, যাতে স্ত্রীকে মাসে ৩০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। ভরনপোষণ বাবদ ওই টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশের দিন থেকেই ওই টাকা দিতে বলা হয়। ডিভোর্সের মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি সেই টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। ফৌজদারি আইনের ১৫ নম্বর ধারায় ওই টাকার দাবি জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী।
এরপর হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদের মামলা চলে। পরে দুই পক্ষের মতামতে বিচ্ছেদ হয়। আদালতে নির্ধারিত হয় যে, স্বামী এককালীন আড়াই লক্ষ টাকা দেবে স্ত্রী’কে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত মিলিয়ে সেই টাকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ ওই আড়াই লক্ষ টাকা পাওয়ার পর স্ত্রী আর কোনও টাকা দাব করবে না। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, আড়াই লক্ষ টাকা দেন স্বামী। দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সেই বিষয়টি নির্ধারিত হয়। স্থাবর বা অস্থাবর কোনও সম্পত্তিতে স্ত্রী কোনও দাবি জানাবে না, এমনটাই স্থির হয়।
২০১৫-র নভেম্বরে দুই পক্ষের সম্মতিতে বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হয়। চন্দননগর আদালতে ডিভোর্স হয়। সেই প্রক্রিয়া চলাকালীন আড়াই লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা স্বীকারও করেন স্ত্রী। আদালতের অর্ডারেও তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এরপর ফের মাসে মাসে ভরণোপষণের টাকা দাব করেন স্ত্রী। হিন্দু বিবাহ আইনের ১৩৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী এককালীন টাকা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। অথচ ফৌজদারী আইনের ১২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, মাসে মাসে টাকা দেওয়ার জন্য আবেদন করেন তিনি। এরপই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী। কিন্তু দুই ভিন্ন ধারার আইন নিয়ে বিভ্রান্তি থাকা বৃহত্তর বেঞ্চে সেই মামলা পাঠানো হয়েছে। আরও পড়ুন: ‘নন্দীগ্রামের মতোই দশা হবে’, ভবানীপুরে মমতার ‘চ্যালেঞ্জার’ খুঁজতে নেমেই হুঙ্কার বিজেপির