কলকাতা: মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত কোন পথে এগোচ্ছে, তা নিয়ে সিবিআই-এর কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই রিপোর্ট দেখে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি। সিবিআই-এর সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের কোনও যোগসাজশ আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় সংস্থা মানিককে যে ধরনের প্রশ্ন করেছে, তা দেখেও অসন্তুষ্ট আদালত। মানিককে কতবার জেরা করা হয়েছে, কী প্রশ্ন করা হয়েছে, সেই সব তথ্য এদিন আদালতে উল্লেখ করে সিবিআই।
এদিন বিচারপতি বলেন, রিপোর্টে যে প্রশ্নোত্তরের উল্লেখ রয়েছে সেগুলি অত্যন্ত ‘মামুলি’। সিবিআই অপেশাদার আচরণ করছে বলেও পর্যবেক্ষণ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। তবে সিবিআই-এর সিট প্রধান সিংভির উপর তাঁর আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। সিবিআই-কে কার্যত ভর্ৎসনা করে এদিন বিচারপতি বলেন, “মানিককে কোনও দিন হেফাজতে নেয়নি সিবিআই। মনে হচ্ছে সিবিআই-এর অফিসারদের সঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যের কোনও সমঝোতা হয়েছে।” বিচারপতি আরও বলেন, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রীর হাতে প্রচুর টাকা, অথচ আমাদের রাজ্যের অনেক মানুষ খেতেই পান না। কাল, মঙ্গলবার ফের এ ব্যাপারে রিপোর্ট দেবে সিবিআই।
সিবিআই-এর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতে জানান, ওএমআর শিট দুর্নীতি নিয়ে মানিককে তিন বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও দুবার প্রাথমিক দুর্নীতি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে। পোস্টিং দুর্নীতি মামলায়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন মানিকই মূল ষড়যন্ত্রকারী। আর এদিন প্রশ্নোত্তর দেখে বিচারপতি ফের বলেন, এগুলো দেখার পর বলাই যায় যাবতীয় দুর্নীতি মানিক করেছেন।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই-এর উদ্দেশে বলেন, “কেন নিখুঁত ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি? কী ধরনের তদন্ত এটা? আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছেন। নিজে থেকে কোনও উদ্যোগ নেননি। আপনাদের কি এটা আদৌ গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা বলে মনে হয়?” মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেটা কার্যকর হয়েছে কি না, সেটাও এদিন জানতে চান বিচারপতি। সিবিআই-এর যুক্তি গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টা দেখা হচ্ছে, তবে মানিক ভট্টাচার্য নাকি সহযোগিতা করছেন না।
এদিকে, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত বলে অভিযোগ, তাঁদের তদন্ত সম্পর্কেও এদিন প্রশ্ন তোলে আদালত। তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে মাত্র ৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। তাঁর বান্ধবীকে খুঁজে বের করার কথা বলেন বিচারপতি। এই প্রসঙ্গে সিবিআই উল্লেখ করেছে, কুন্তল ঘোষ জানিয়েছিলেন তাপসকে ব্যাগ ভর্তি টাকা দেওয়ার কথা, যেটা মানিককে দেওয়া হয়। সেই দুর্নীতির তদন্তে বিধায়কদের যুক্ত থাকার কথা উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য। বিচারপতি এ কথা শুনে বলেন, “জানি অনেকে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরে ঘোরেন, অথচ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।”