সুজয় পাল: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার (Post Poll Violence) মামলায় সিবিআই (CBI)-কে দিয়ে তদন্ত করানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। গত ১৯ অগস্ট এই মামলার রায় দেয় পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তম ডিভিশন বেঞ্চ। খুন, অস্বাভাবিক মৃত্যু, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের তদন্ত করবে সিবিআই এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলার তদন্ত করবে সিট। যার প্রেক্ষিতে শনিবার নদিয়ায় থেকে ২ ব্যক্তিকে আটকও করা হয়েছে। এ হেন সিবিআই দলের আপাতত কোনও বিরতি নেই। শনি-রবিবারও তাদের স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং ইউনিট ছুটে যাবে জেলা থেকে জেলায়।
ভোট-পরবর্তী হিংসার তদন্তে গঠিত সিবিআই দলের ছুটি বাতিল হয়েছে শনি ও রবিবারেও। এমনকি সরকারি ছুটির দিনেও তারা কাজ করবে। কোনও লিখিত অর্ডার নেই, তবে এটাই দিল্লির মৌখিক আদেশ বলে খবর। সাধারণত, সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)- এর মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে শনি-রবিবার বড় কোনও কাজ করতে দেখা যায় না। কোনও মামলার তদন্তে এই দুই দিনে খুব কম ক্ষেত্রেই অভিযান চালায় তারা।
কিন্তু এই মামলার গুরুত্ব অন্য। তাই ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে তৎপরতা এতটাই যে একদিনের জন্যেও তদন্ত বন্ধ রাখা যাবে না। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরুর প্রথম সপ্তাহ থেকেই তৎপরতা নজরে আসছে। আজ, শনিবার জগদ্দলে একটি ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। আগামিকাল, অর্থাৎ রবিবারও তাঁরা অন্য জেলায় গিয়ে আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলবেন। রেকর্ড করবেন তাঁদের বয়ান। উদ্দেশ্য মূলত একটাই- দ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। আর মৃত ও আক্রান্ত এবং তাদের পরিবার যাতে সুবিচার পায় তা নিশ্চিত করা।
সিবিআই সূত্রে খবর, মূলত দুটি কারণে সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে গোয়েন্দাদের। প্রথমত, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্তে স্টেটাস রিপোর্ট আদালতে জানানো। দ্বিতীয়ত, রাজ্যজুড়ে মামলার সংখ্যা এতটাই বেশি যে ছুটি নিয়ে কাজ করতে হলে তদন্ত শেষ করতেই কয়েক বছর লেগে যেতে পারে! তাই এই বিরামহীন তদন্তের নির্দেশ।
এটাই অবশ্য প্রথম নয়। এর আগে রিজওয়ানুর মামলা, নেতাই মামলা এবং জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের তদন্তেও বিশেষ তদন্তকারী দলের ক্ষেত্রে ছুটি বাতিল করা হয়েছিল বলেই খবর। সাধারণত, সিবিআই কিংবা ইডি’র গোয়েন্দারা অনেকেই শনি বা রবিবার অফিসে আসেন না। শনিবার অফিস এলেও কাজের চাপ খুব একটা থাকে না। রবিবার তো কেউ কেউ আসেন-ও না অফিসে। ওই দিনগুলিতে গোয়েন্দারা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত করা থেকে কেস ডায়েরি লেখা, সব কাজ বাড়ি থেকেই করে থাকেন। সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার এক অফিসারের যেমন বক্তব্য, “প্রত্যেকটা সিবিআই অফিস একটা থানার মতোই কাজ করে। থানায় যেমন ছুটি হয় না, তেমনি আমাদেরও ছুটি বলে কিছু নেই। আমি তো শনিবারেও অফিস যাই।”
উল্লেখ্য, ভোট-পরবর্তী হিংসার তদন্তে হাইকোর্টের আদেশের পরেই চারটি দল গঠন করেছে সিবিআই। প্রত্যেকটি দলের মাথায় একজন জয়েন্ট ডিরেক্টর। মোট ১০৯ জন অফিসার নিয়ে তৈরি হয়েছে এই স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং ইউনিট। এর মধ্যে ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার। বাকিরা সুপারভাইজারি অফিসার। রাজ্যকে চারটি জোনে ভাগ করে শুরু হয়েছে তদন্ত। একটি উত্তরবঙ্গ, একটি দক্ষিণবঙ্গ, একটি পশ্চিমাঞ্চল ও অন্যটি কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা। সব জোনে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে ক্যাম্প গঠন করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের ক্যাম্প হয়েছে দুর্গাপুরে। বাকি দুটি ক্যাম্প কলকাতা থেকেই কাজ করছে।
এই সবক’টি ক্যাম্পেই প্রতিদিন কাজ চলবে। প্রত্যেকটি ক্যাম্প থেকেই রোজ একটি বা দুটি দল স্পট ভিজিট করবে। অর্থাৎ, আক্রান্তদের সঙ্গে তাদের বাড়ি গিয়ে কথা বলবে। অন্য দলটি ক্যাম্প অফিসে বসেই তদন্ত চালাবে। সব মিলিয়ে ভোট-পরবর্তী হিংসার তদন্তে সিবিআইয়ের তৎপরতা তুঙ্গে। আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনার তদন্তে নামল সিবিআই, ২ জেলা পর্যবেক্ষণ করলেন আধিকারিকরা