কলকাতা: রাজ্য সরকারের দেওয়া নিরাপত্তার উপর বিন্দুমাত্র ভরসা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। যে কারণে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় তদন্ত করতে আসা সিবিআই-এর তদন্তকারী দলকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সূত্রের খবর, চার সিবিআই-এর নিরাপত্তায় ৪ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সিবিআই-এর চারটি দলকে চারভাগে বিভক্ত হয়ে নিরাপত্তা প্রদান করবেন আধাসেনা বাহিনী। এর মধ্যে তিনটি কোম্পানি থাকবে দক্ষিণবঙ্গে, একটি যাবে উত্তরে।
বৃহস্পতিবার থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে নেমে পড়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। রাজ্য পুলিশের প্রতিনিধি এবং নিরাপত্তাও রয়েছে তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু যাদবপুরে মানবাধিকার আধিকারিকদের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছিল, তারপর কেবলমাত্র রাজ্যের নিরাপত্তা আর নিশ্চিন্ত করতে পারছে না কেন্দ্রকে। সেটা বস্তুত এই পদক্ষেপের মাধ্যমেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, চার কোম্পানি আধাসেনার মধ্যে দুই কোম্পানি থাকবে শহর কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। এক কোম্পানি থাকবে দুর্গাপুরে। বাকি আরেক কোম্পানি যাবে কোচবিহারে।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সিবিআই-এর তদন্তকারীরা কাজ শুরু করার পর থেকেই এই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ঘুরে ঘুরে ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও বয়ান রেকর্ড মসৃণভাবে করা যায়, সেই জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা। যেখানে যেখানে সিবিআই আধিকারিকরা যাবেন, সেখানে সেখানে তাঁদের নিরাপত্তা দেবেন আধাসেনা জওয়ানরা।
জানা গিয়েছে, সিবিআই-এর প্রতিনিধি দলের সামনে ও পিছনে এসকর্ট হিসেবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় এই ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যেভাবে ক্রমাগত প্রশ্ন উঠেছে, তার মধ্যে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উপর দিল্লি আস্থা রাখতে পারছে না।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার তদন্তে নেমে প্রথমে কাঁকুরগাছিতে খুন হওয়া বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের বাড়িতে যান সিবিআই কর্তারা। কথা বলেন তাঁর দাদা বিশ্বজিৎ সরকারের সঙ্গে। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় দিল্লিতে সিবিআই-এর সদর দফতরে ৯টি এফআইআর রুজু করা হয়েছে। অর্থাত্ ৯টি এফআইআর-এর ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করলেন গোয়েন্দারা। তার মধ্যে রয়েছে কাঁকুরগাছির অভিজিৎ সরকার খুনের ঘটনাও। তদন্তে এটাই ছিল প্রথম তাঁদের ‘স্পষ্ট ভিজিট’। এরপর ভাটপাড়ার বোমা হামলায় মৃত জয়দেব যাদবের বাড়িতে গিয়েও তদন্ত করেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সূত্রের খবর, নিহতদের পরিবারবর্গের কাছে জানতে চাওয়া হয় পুলিশ এতদিনে কত জনকে গ্রেফতার করেছে, কাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারীদের সামনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে অভিজিতের পরিবার। উল্লেখ্য, এদিন সিবিআই আধিকারিকরা যখন ঘটনাস্থলে আসছিলেন, তখন হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরাও আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, কেবল সিবিআই আধিকারিকরাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হোমিসাইড শাখার তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিজিতের পরিবারও। আরও পড়ুন: কাঁকুরগাছির নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিতের বাড়িতে সিবিআই, রাজ্যের হিংসায় দায়ের ৯টি এফআইআর