কলকাতা: সব জট পেরিয়ে অবশেষে রাজ্যের স্থায়ী ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশের পদে আসীন হচ্ছেন মনোজ মালব্যই। ডিজি পদে অবশেষে তাঁকেই ছাড়পত্র দিল কেন্দ্রীয় সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার, এই ছাড়পত্র এসে পৌঁছয় রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে। মনোজ মালব্যকে ডিজি করা হলেও তাঁকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়নি। কার্যনিবাহী ডিজি (Director General of Police ) হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছিলেন মনোজ (Manoj Malviya)। কেন্দ্রীয় অনুমোদন পাওয়ার পর অবশেষে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য।
চলতি বছরের ৩১ অগস্ট রাজ্যের তৎকালীন ডিজি সি বীরেন্দ্রের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়। তাঁর পরিবর্তে কে দায়িত্ব পাবেন তা নিয়ে যথেষ্ট নজর ছিল ওয়াকিবহাল মহলের। নানা মহলের জল্পনায় প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন ১৯৮৬ ব্যাচের আইপিএস মনোজ মালব্য। রাজ্যের পাঠানো তালিকায় মনোজ ছাড়াও ১৯৮৭ ব্যাচের অফিসার নীরজনয়ন পাণ্ডে, সুমন বালা সাহু, অধীর শর্মা, গঙ্গেশ্বর সিংহের অফিসারদের নামও ছিল।
সি বীরেন্দ্রর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেপ্টেম্বর থেকে কাউকে দায়িত্ব নিতেই হত। সেই মতো ওই মাসেই ডিজির পদে আসীন হন মনোজ। তবে পাকাপাকিভাবে তাঁকে সেই পদে নিয়োগ করা হয়নি। তারই মধ্যে, রিয়েল সানরাইজ কেমটেক লিমিটেড ও সানপ্ল্যান্ট অ্যাগ্রো লিমিটেড- এই দুটি ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয় মনোজকে। কিন্তু, বারবার তলব করার পরেও তিনি আদালতে হাজিরা দেননি। সদ্য দায়িত্ব পেয়েই মনোজকে আদালতে হাজিরার নির্দেশে দিতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয় সংশ্লিষ্ট মহলে। অবেশেষে নানা টালবাহানার পর রাজ্যের ডিজি হিসেবে পাকাপাকি ভাবে নিয়োজিত হচ্ছেন মনোজ।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের অনুমোদন নিয়েই ডিজি নিয়োগ করে রাজ্য। সেক্ষেত্রে বীরন্দ্র অবসরের সময় এগিয়ে আসতেই রাজ্যের তরফে ৬টি নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই তালিকায় ছিলেন মনোজ। তবে তাঁর নাম চূড়ান্ত করার আগে প্রাথমিক পর্যায়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়। নবান্নর তরফে জানানো হয়, ৩১ অগস্ট সি বীরেন্দ্রর অবসর নেওয়ার আগের সন্ধ্যা পর্যন্তও ইউপিএসসি কমিটি রাজ্যের পরবর্তী ডিজি নিয়ে বৈঠক করেনি। ফলে বীরেন্দ্র পর রাজ্য পুলিশের পরবর্তী ডিজি কে হবেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়।
রাজ্য সরকারের তরফে যে তালিকা পাঠানো হয়, তাতে অনেকের নাম থাকলেও তা চূড়ান্ত করা হয়নি। ৩০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন অফিসারদের নামের তালিকা পাঠানো হয়। ইউপিএসসি-র বৈঠক না করার পিছনে তৈরি হয় রাজনৈতিক জল্পনা। অনেকে বলেন, রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে এই কাজ করা হচ্ছে। সেই কারণেই এই ঢিলেমি।
রাজ্য সরকার ডিজি-র যে তালিকা তৈরি করে, তা নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করে অমিত শাহ-র দফতর। তারই চূড়ান্ত হয় মনোজ মালব্যের নাম। আগে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিজি নিয়োগ না করা হলে ভারপ্রাপ্ত ডিজি নিয়োগ করা হত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বহুবার ভারপ্রাপ্ত ডিজি নিয়োগের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোভিড পরিস্থিতির জেরে অসমে ভারপ্রাপ্ত ডিজি নিয়োগ করতে হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতে, বাংলার ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে বলে আগেই অনুমান করা হয়েছিল। অবশেষে, প্রায় তিনমাস কার্যনির্বাহী ডিজি হিসেবে দায়িত্বপালনের পর পাকাপাকিভাবে ডিজি হিসেবে নিয়োজিত হলেন মনোজ মালব্য।