কলকাতা : বছর নয়েক আগে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিকে (Chitfund Scam) ঘিরে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। একের পর এক চিটফান্ড সংস্থার প্রতারণার জাল প্রকাশ্যে আসতে থাকে। গ্রেফতার হন বিভিন্ন চিটফান্ড সংস্থার কর্ণধাররা। টাকা ফেরতের দাবিতে রাস্তায় নামেন প্রতারিতরা। বেশি লাভের প্রলোভনে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ ওই সব চিটফান্ড সংস্থায় টাকা রেখেছিলেন। প্রতারিত হয়েছেন জানতে পেরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সর্বস্ব খুইয়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
কেটে গিয়েছে নয় বছর। রাজ্যে চিটফান্ডের রমরমা নেই বলে যখন অনেকে ভেবে বসেছিলেন, তখনই সামনে এল প্রতারণার দুটি বড় চক্র। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকজনকে। এই দুটি চিটফান্ড সংস্থার একটি হল সুরানা গ্রুপ। এই সংস্থার বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বালিগঞ্জের কুইন্সপার্ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ওই সংস্থার কর্ণধার শান্তি সুরানাকে।
আগে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি চিটফান্ড সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছিল। কিন্তু, সুরানা গ্রুপের প্রতারণার ধরন অবাক করেছে তদন্তকারীদের। এই সংস্থা টার্গেট করত ধনী ও বিত্তশালীদের। অল্প সময়ে টাকা দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা তুলেছে এই সংস্থা। আরও লক্ষ্যণীয়, এই চিটফান্ডের সংস্থার প্রতারিতদের বেশিরভাগই শহরের বাসিন্দারা।
অন্য যে চিটফান্ড সংস্থার ‘কীর্তি’ সামনে এসেছে, তারাও কার্যকলাপও ছিল কলকাতা কেন্দ্রিক। কলকাতার কয়েক হাজার মানুষকে প্রতারিত করে কয়েকশো কোটি টাকা তুলেছে। মাত্র তিন বছরে টাকা দ্বিগুণ করার প্রলোভন দেখিয়ে এন্টালি, পার্ক সার্কাস, বেলেঘাটা, বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে টাকা তুলত। এই প্রতারণা চক্রের মূল মাথা লিজা মুখোপাধ্যায়কে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় আরও কয়েকজনকে।
চিটফান্ডের কবলে-
এই দুটি প্রতারণা চক্রের জাল ফাঁস হওয়ার পর অনেকের মনেই নয় বছর আগের স্মৃতি ফিরে আসছে। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ । সমান ভাবে ছড়িয়েছিল চিটফান্ডের জাল। কমপক্ষে ৫০ লক্ষ মানুষ প্রতারিত। চিটফান্ড সাফারার ফোরামের দাবি, কমবেশি ১৫৩টি চিটফান্ড সংস্থায় লগ্নি করেছিল আম জনতা। সিবিআই(CBI), ইডি (ED) তদন্ত শুরু করায় কোথাও মনে হয়েছিল, এবার হয়ত ফেরত মিলবে সঞ্চয়ের টাকা। কিন্তু, সেই আশা দিবাস্বপ্নের মতোই। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে চিটফান্ড সাফারার ফোরাম।
চিটফান্ড নিয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। লিজা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগ ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩ বছরে টাকা দ্বিগুণের মতো প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত, তা সাধারণ মানুষকেও বুঝতে হবে। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে চিটফান্ড চক্রের রমরমা চলতেই থাকবে বলে তাঁদের অভিমত।
আরও পড়ুন : Anubrata Mondal vs CBI: এখন ডাক্তারের কথাই বেদবাক্য, বিছানা ছেড়ে মোটে উঠবেন না অনুব্রত, ‘ফেরালেন’ সিবিআইকে