প্রয়াত কবি-সাহিত্যিক রাহুল পুরকায়স্থ
Rahul Purkayastha: ষাটের দশকে বেলঘরিয়ার যতীন দাস নগর উদ্বাস্তু কলোনিতে জন্ম কবি রাহুল পুরকায়স্থের। শহরতলির সংগ্রামী জীবনে অভ্যস্ত। নকশালদের আগুন ঝরানো দিনে, কলোনির সংগ্রামী রোজনামচায় বড় হওয়া তরুণ, হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্ষুরধার কলম!

বৃষ্টি ভেজা রাত। এলোমেলো হাওয়া। প্রিয়জনদের উপস্থিতিতে শেষবারের মতো চোখ বুজলেন। চিরবিদায় নিলেন কবি রাহুল পুরকায়স্থ। প্রয়াত TV9 বাংলার কনসাল্টিং এডিটর (প্রোগ্রামিং) রাহুল পুরকায়স্থ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। কলোনি জীবনে, উত্তাল সাতের দশকের পরিসরে বড় হয়ে ওঠা। খুব কম বয়স থেকেই পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন তিনি। তারপর সাংবাদিকতায় প্রবেশ।
আটের দশক থেকেই তাঁর লেখা কবিতা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। পেশাদারি সাংবাদিকতার শুরু ‘আলোকপাত’ পত্রিকার মাধ্যমে। তারপর দূরদর্শন দর্পণ। তারপর খাস খবর ও সব শেষে TV9 বাংলা। কর্মজীবনে একাধিক গণমাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রভাব রয়েছে রাহুল পুরকায়স্থর কবিতায়। কবি হিসেবে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রেষ্ঠ মধুসূদন পুরস্কার। পেয়েছেন বাংলা অ্যাকাডেমি, কবিতা অ্যাকাডেমি, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্মান, শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্মান, ভাষানগর সম্মান। তাঁর লেখা কবিতার বইয়ের সংখ্যা ২০। পাঠক মহলে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের পরেই উচ্চারিত হয় রাহুল পুরকায়স্থর নাম।
ষাটের দশকে বেলঘরিয়ার যতীন দাস নগর উদ্বাস্তু কলোনিতে জন্ম কবি রাহুল পুরকায়স্থের। শহরতলির সংগ্রামী জীবনে অভ্যস্ত। নকশালদের আগুন ঝরানো দিনে, কলোনির সংগ্রামী রোজনামচায় বড় হওয়া তরুণ, হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্ষুরধার কলম! সেখান থেকেই জন্ম নিল ‘কলোনির কবিতা’। শব্দের আলোয় তিনি চেনালেন ‘অন্ধকার’কে। সত্তরের দশকের জীবন্ত দলিল তাঁর ‘বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা’। ময়দান ও পানশালার আলো-আঁধারিতে তিনি চেনান গোর্কির নীচের তলাকে। প্রিয় স্বরলিপি-তে বাঁধেন প্রিয়জনদের। এমনই এক মানুষ রাহুলদা। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শ্বাসাঘাত তাঁতকল পুরনো হরফ’।
লেখনীগুণে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ কবিতা অ্যাকাদেমি তাঁকে সুভাষ মুখোপাধ্যায় সম্মাননা দিয়েছে। পেয়েছেন বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্মানও। গত পয়লা বৈশাখে তাঁর হাতে মাইকেল মধুসুদন দত্ত পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ঐহিক সম্মাননা প্রাপক ভারত-বাংলাদেশের ৭ সাহিত্যিকের মধ্যে অন্যতম রাহুল পুরকায়স্থ। পেয়েছেন গৌতম বসু সম্মাননা। বাঙালিরা তাঁর চোখে মহাকাব্যের সন্তান। তিনি বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ সারাজীবন আগুন হাতে প্রেমের গান গেয়েই চলেন। এক কথায় প্রান্তিক মানুষের কথাকার রাহুল পুরকায়স্থ।
TV9 বাংলার আজ মন খারাপ। সবার প্রিয় রাহুলদার ঘরটা বড্ড খালি। কত স্মৃতি এ ঘরে জড়িয়ে। কত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, কত হাসির মুহূর্ত। রাহুল পুরকায়স্থর সান্নিধ্যে আসার সুযোগ আর সময় আটকে আছে এই ঘরে। কিন্তু, সবার মনে থেকেও, না থাকার অনুভূতিটা চিরকাল থেকে যাবে রাহুলদাকে নিয়ে।
বিদায় প্রান্তিক মানুষের কথাকার। বাংলা সাহিত্যে, বাংলা গণমাধ্যমে কখনও বিস্মৃত হবে না রাহুল পুরকায়স্থর উপস্থিতি। তাঁর সৃষ্টিরা চিরসবুজ হয়ে থেকে যাবে।
