কলকাতা: লরেটো কলেজের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। ভর্তিই নেওয়া হবে না বাংলা বা হিন্দি মাধ্যমের পড়ুয়াদের, এমনই লেখা হয়েছিল বিজ্ঞপ্তিতে। সেই নিয়ম বাতিল করার নির্দেশ দিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কেন এমন একটি শর্ত দেওয়া হল, তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্য়া দিতে পারেনি লরেটো কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে চলতি বছরে স্নাতকে ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে, তাই এবার আর বিজ্ঞপ্তি বদলানো সম্ভব নয়। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষেই নিয়ম বদলাতে হবে লরেটো কলেজকে।
কলকাতার প্রসিদ্ধ ও পুরনো কলেজগুলির মধ্যে অন্যতম এই লরেটো কলেজ। অনেক পড়ুয়াই এই কলেজে পড়ার স্বপ্ন দেখেন। সেখানে বাংলা ও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলে। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা ছিল, ‘লরেটো কলেজের পড়াশোনার মাধ্যম ইংরেজি। আমাদের লাইব্রেরিতে শুধুমাত্র ইংরেজি বই ও জার্নাল রাখা হয়। তাই দ্বাদশ শ্রেণিতে যাঁদের পড়াশোনার মাধ্যম আঞ্চলিক ভাষা ছিল, তাঁদের ভর্তি নেওয়া হবে না।’
কিন্তু বাধ সাধল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি বলে, যে কোনও মাধ্যম থেকে আসা পড়ুয়ারাই এর অধীনে পড়াশোনা করতে পারেন। আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন হয়েও কেন লরেটো কলেজ এমন একটা সিদ্ধান্ত নিল? তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। আজ, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্য়া তারা দিতে পারেনি বলেই সূত্রের খবর। এরপরই নিয়ম বদলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লরেটোর এমন একটি সিদ্ধান্তে অবাক শিক্ষাবিদরাও। পবিত্র সরকার বলেন, এটা লজ্জার। যে ভাবে বাংলাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র ইংরেজিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেটা মেনে নেওযা যায় না বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, লরেটোর অনেক প্রাক্তনী আছেন, যাঁরা ইংরেজি ও বাংলায় সমান দক্ষ। তবে বাংলা নিয়ে বাঙালির দ্বিচারিতা কম নেই, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন পবিত্র সরকার। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁরা বাংলা ভাষাকে গর্ব বলে উল্লেখ করেন, তাদের মধ্যে কজন সন্তানকে বাংলা মাধ্যমে পড়ান?
অন্যদিকে, শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কোনও অফিসার এ রাজ্যে দায়িত্ব পেলে, তাঁকে বাংলাটা শিখতে হয়। এমনকী ইংরেজরা যখন বাংলায় এসেছিলেন, তখন তাঁদেরও বাংলাটা শিখতে হয়েছিল।