কলকাতা: রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অচলাবস্থার অভিযোগ তুলে এককাট্টা ওমপ্রকাশ মিশ্র, গৌতম পাল সহ বাংলার শিক্ষাবিদদের একটি বড় অংশ। রাজ্যপাল সম্প্রতি ১৩ জন শিক্ষাবিদকে বিশ্ববিদ্য়ালয় পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এই নিয়েই আপত্তি ওমপ্রকাশদের। তাঁদের বক্তব্য, যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কেউ উপাচার্য নন। তাঁরা অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কাজকর্ম সামলানোর অনুমতি পেয়েছেন কেবল। আর এই সিদ্ধান্তের ফলে যে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে, সেই কথাটাই বুঝিয়ে দিতে চাইলেন ওমপ্রকাশরা।
আজ বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকে বসেছিলেন ওমপ্রকাশ মিশ্র, গৌতম পাল, শিবাজি প্রতিম বসু, অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, মলয়েন্দু সাহা, দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। ওমপ্রকাশের বক্তব্য, রাজ্যজুড়ে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এক চূড়ান্ত অচলাবস্থা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বললেন, ‘একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য নেই, এমনকী অন্তর্বর্তী উপাচার্যও নেই। আচার্য ১৩ জন অধ্যাপককে দায়িত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলি সামলানোর। কিন্তু এটা কোনও স্থায়ী নিয়োগ নয়।’ শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ যাতে কোনওভাবে বঞ্চিত না হয়, সেই বার্তাও দিলেন তিনি। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কোনও নেতিবাচক ভূমিকা নয়, বরং গঠনমূলক ভূমিকার প্রয়োজন।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি তথা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহউপাচার্য গৌতম পাল আবার সওয়াল করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনের পক্ষে। তাঁর মতে, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা এককথায় ‘অভূতপূর্ব’। বিগত বছরগুলিতে, বিশেষ করে ২০১১-২৩ সালের মধ্যে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন এসেছে, তাও তুলে ধরেন তিনি। বললেন, ‘২০১১-২৩ উচ্চশিক্ষায় অভূতপূর্ব উন্নতি। ২০টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। পরিকাঠামো বেড়েছে। ছাত্র ভর্তির হার বেড়েছে। ড্রপ আউট হার কমেছে।’ রাজ্য সরকার যে সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনের পক্ষে, তাও বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। বললেন, ‘রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে কখনও হস্তক্ষেপ করেনি। উপাচার্য ও সহউপাচার্য নিয়োগ ছাড়া সবটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল ব্যবস্থা নেয়।’
গৌতম পালেরও বক্তব্য, রাজ্যপাল তথা আচার্য সম্প্রতি যাঁদের উপাচার্য করার কথা বলছেন, তাঁরা আসলে অধ্যাপক। শুধু কাজটা সামলে দিচ্ছেন। রাজ্যের শিক্ষা দফতর ও রাজভবনের মধ্যে সম্পর্ক যে একে অপরের ‘পরিপূরক’ হওয়া উচিত, ‘প্রতিপূরক বা প্রতিরোধী’ নয়… তাও বোঝানোর চেষ্টা করেন গৌতমবাবু। মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করার বিল নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্য কেন এখনও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গৌতম পালের মনে।
দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংক্রান্ত বিষয়ে একই সুর। তাঁর বক্তব্য, যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁরা হলেন আসলে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত অধ্য়াপক। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁদের কিছু সীমা থাকে। বাস্তব ক্ষেত্রে তাঁরা অর্থনৈতিক কোনও বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ফলে এক অচলাবস্থা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করছেন তিনি। এর পাশাপাশি রাজ্যে নয়া শিক্ষানীতির প্রণয়ন কতটা বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব, তা নিয়েও সংশয় রয়েছেন দেবনারায়ণবাবুর মনে। শিক্ষাবিদ শিবাজিপ্রতিম বসু আবার রাজ্যপালের এই উপাচার্য নিয়োগ ঘিরে সিদ্ধান্তকে অনেকটা মিউজিক্যাল চেয়ারের মতোই দেখছেন। আজ কেউ কিছু মাসের জন্য, আবার কাল অন্য কেউ।
সবমিলিয়ে এদিন ওমপ্রকাশবাবুরা বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, তাঁরা শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের কথাই ভাবছেন এবং সেই কারণেই রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।