কলকাতা: চারমাস ধরে মর্গে পড়ে রয়েছে দেহ। সেই দেহ আদতে কার, সেটা জানা নেই পরিবারের। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিনই মৃত্যু হয়েছিল বেলেঘাটার বাসিন্দা, বিজেপি কর্মী অভিজিতের (Abhijit Sarkar)। মৃতদেহ শণাক্ত করা যায়নি বলে পরিবার মানতে চায়নি যে মর্গে থাকা দেহটা অভিজিতের। চার মাস ধরে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ-র রিপোর্ট না পাওয়ায় নিশ্চিত হতে পারেনি পরিবার। তাই সৎকারও করা হয়নি সেই দেহ। অবশেষে পরিবারের আবেদনে সেই দেহের ডিএনএ রিপোর্ট পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত।
ভাই অভিজিৎ সরকারের দেহের ডিএনএ রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও দেহ চেয়ে শিয়ালদা আদালতে আবেদন করেছিলেন তাঁর দাদা বিশ্বজিৎ সরকার। আদালতের তরফে এরপর সিবিআই-এর মতামত জানতে চাওয়া হয়। আজ শুনানিতে রিপোর্ট সহ হাজিরা দিতে বলা হয়। এ দিন সিবিআই ওই সব রিপোর্ট ও দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার অনুমতি দেয়। ডিএনএ ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এ দিন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এত দিন পর্যন্ত সিবিআই-এর কাছেই ছিল সেই রিপোর্ট। পাশপাশি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে অভিজিতের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ দিন শুনানি শেষে আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা তিবরেওয়াল জানিয়েছেন, দাদা বিশ্বজিতের সঙ্গে মৃতদেহের ডিএনএ মিলে গিয়েছে। তাই দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এবার অভিজিতের দেহ সৎকার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পরিবার। অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, এত দিন ধরে তাঁরা যে লড়াই লড়ছেন, তাতে একটা সাফল্য মিলেছে। সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এত দিন পরে ভাইয়ের দেহ পাবেন বলে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। তবে সব দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্বজিৎ সরকার।
তদন্তের স্বার্থেই এতদিন অভিজিৎ সরকারের দেহ সৎকার করতে দেওয়া হয়নি। পচে-গলে সেই দেহ আর চেনার কোনও উপায়ও ছিল না। অভিজিৎ সরকারের পরিবারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, ওই দেহ আদৌ অভিজিতের কি না। তাঁদের অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় দেহ সরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। এরপরই ডিএনএ পরীক্ষা হয় ওই দেহের। কিন্তু যেহেতু ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়, তাই সেই ডিএনএ রিপোর্ট ছিল সিবিআই-এর হাতে।
বিধানসভা নির্বাচনের পর নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলার রাজনীতি। ভোটের দিন বিকেলেই পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ সরকারকে। গলায় পেঁচানো ছিল তার। পরিবারের দাবি, বিজেপি করার অপরাধেই খুন করা হয় তাঁকে। তারপর থেকে বিচারের আশায় থানা, আদালত সর্বত্রই ছুটেছে পরিবার। ভোটের পর রাজনৈতিক হিংসার পুরো তদন্তভার এখনও সিবিআই-এর হাতে। হয়ত সুবিচার মিলবে এক দিন, এই আশাতেই বুক বেঁধেছে পরিবার। আপাতত অভিজিতের দেহ সৎকার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পরিবার। আরও পড়ুন: ‘এবার আমার সেল্ফ ডিফেন্সের সময় এসেছে’, হুঁশিয়ারি অর্জুন সিংয়ের