কলকাতা: ২০১৮ আর ২০২৩ এক নয়। কলকাতা পুলিশ এখন CPI(M)-কে আটকাতে পারছে না। সোমবার রানি রাসমনি অ্যাভিনিউয়ে জনসমাবেশ থেকে এমনই হুঙ্কার দিলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন CPI(M)-এর ব্রিগেড থেকে শুরু করে সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তাই আগামী নির্বাচনে বামফ্রন্ট ফের লড়াইয়ে দাগ কাটবে বলেই আশাবাদী সেলিম। এপ্রসঙ্গে ISF কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। তবে কেবল মিটিং, মিছিল বা রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে লড়াই চালালে চলবে না। জনগণের পাশে থাকতে হবে বলেও বার্তা দেন তিনি।
এদিনের জনসমাবেশ থেকে দলীয় কর্মীদের জনগণের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, “গত জুন মাস থেকে আমরা যেখানে মানুষের কাছে গিয়েছি, সেখানেই মানুষের সাড়া পেয়েছি। তাঁরা কথা বলেছেন। অভিযোগ জানিয়েছেন। মানুষ দু-হাত তুলে আমাদের সাহায্য করেছে।” তবে এতেই আত্মতুষ্ট না হওয়ার বার্তা দিয়ে সেলিমের পরামর্শ, “এবার সকলের বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছতে হবে।” মহম্মদ সেলিমের মতো একই সুর শোনা যায় CPI(M)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির গলায়। তিনি বলেন, “এই রাজ্যে মানুষের জন্য যদি কেউ লড়তে পারে, সেটা হল লাল ঝাণ্ডা।” এপ্রসঙ্গে রাজ্যের শাসক ও প্রধান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন CPI(M) নেতৃত্ব।
এদিন তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে একযোগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মহম্মদ সেলিম বলেন, “তৃণমূল দুর্নীতি শিখেছে বিজেপির থেকে। রাজ্যটা উচ্ছন্নে গিয়েছে।” শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশের অবস্থা ভাল নয় বলেই দাবি জানান তিনি। দুর্নীতির অবসান ঘটাতে রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রেও সরকার বদলের দাবি তোলেন CPI(M) নেতৃত্ব। কেন্দ্রে বদল ঘটাতে এদিন জোট-বার্তাও শোনা যায় সীতারাম ইয়েচুরির গলায়। তিনি বলেন, “ভারতকে বাঁচাতে হলে সব ধর্মনিরপেক্ষ দল গুলিকে এক হতে হবে। সবাইকে এক হতে হবে।”
মহম্মদ সেলিমের গলায় এদিন ISF নেতা নওশাদ সিদ্দিকীর পাশে থাকার বার্তা শোনা যায়। ISF কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের আচরণের তীব্র নিন্দা করেন তিনি। প্রতিবাদী স্বর বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ তুলে সেলিম বলেন, “সেদিন নওশাদ সিদ্দিকী বললেন যাঁরা হামলা করেছে তাদের গ্রেফতার করতে হবে। উল্টে তাঁকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এটা প্রতিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই।” আইনি লড়াই চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
‘রক্ষা কর দেশের সংবিধান। পরাস্ত কর দাঙ্গাবাজ সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে, শক্তিশালী কর বিকল্পের লড়াই, বিকল্প বামপন্থাই’- এই স্লোগানকে সামনে রেখেই শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার রানি রাসমণি রোডে সোমবার সমাবেশের আয়োজন করে CPIM-এর কলকাতা জেলা কমিটি। CPI(M) দলের প্রতিষ্ঠার সময় ৯ জন পলিটব্যুরোর সদস্য ‘নবরত্ন’-এর নামাঙ্কিত ন’টি ব্রিগেড মিছিল করে সমাবেশে আসে। আর সেই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসাবে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, রামচন্দ্র ডোম সহ বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ।