কলকাতা: ‘ভুল’ থেকে শিক্ষা নিয়েও একই ভুলের পুনরাবৃত্তি! বিধানসভা ভোটের পর একাধিকবার সিপিএম স্বীকার করেছে যে ‘বিজেমূল’ শব্দবন্ধের প্রয়োগ ভুল হয়েছিল। কিন্তু শনিবার ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণা হতেই আবারও সেই তত্ত্বই খাড়া করা হল বামেদের তরফে। তৃণমূলের সঙ্গ কি তলে তলে কোথাও বিজেপির সখ্যতা রয়েছে? শনিবার সেই প্রশ্নই তুলতে শোনা গেল সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে। ইডি, সিবিআই প্রসঙ্গ টেনে যাদবপুরের প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, “তৃণমূল কোনও ভাবে বেকায়দায় পড়ুক সেটা দিল্লি চায় না।”
দেশের মোট ৩২ টি বিধানসভা ও তিনটি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘোষণা হয়েছে মাত্র একটি আসনে, ভবানীপুরে। যা নিয়ে বিজেপি বা সিপিএম, কোনও শিবিরই সন্তুষ্ট নয়। যে বিজেপি বিধানসভা ভোটের পর কমিশনের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো ধন্য ধন্য করেছিল, তারাই এখন সমালোচনায় সরব। শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী নাকি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে ‘বিশেষ অনুরোধ’ জানিয়েছিলেন। সুজনবাবুর বক্তব্য, ভবানীপুরে উপনির্বাচনের বিষয়টিকে সেই কারণেই ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দিয়েছে কমিশন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এর মাধ্যমে কার্যত তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে গোপন আঁতাতের বিষয়টিকে সামনে আনতে চেয়েছেন তিনি।
সিপিএমের এই বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “উপনির্বাচন বা পুরনির্বাচন, সব নির্বাচনই সময়ই মতো হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন বাকি আসনগুলিতে উপনির্বাচন করাচ্ছে না। একমাত্র ভবানীপুর বিধানসভায় উপনির্বাচন করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের বিশেষ অনুরোধে এই উপনির্বাচন হচ্ছে, মানুষের প্রতিনিধিত্বের কারণে নয়। এবং মুখ্যমন্ত্রী যিনি, তিনি যাতে বহাল থাকতে পারেন ও কোনও অসুবিধা না বোধ করেন, সেই জন্য আলাদাভাবে বিচার করে শুধুমাত্র ভবানীপুরে উপনির্বাচন করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের স্পেশাল আগ্রহ কোথায়, এবং সেই আগ্রহকে মান্যতা দিতে যে দিল্লি খুবই উৎসাহী, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল।”
কেন্দ্র-রাজ্য গোপন আঁতাতের বিষয়টিও শনিবার ফের একবার উস্কে দেন সুজনবাবু। বলেন, “সবাই মনে করেন যে লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধিতাটা আরও বেড়েছে। কিন্তু অন্য কোনও শক্তি সামনে আসুক, এবং তৃণমূল খুব বেকায়দায় পড়ুক, এটা বিজেপি চায় না। যদি তা চাইত, তাহলে সিবিআই অথবা ইডি কখনও দাঁড়াচ্ছে কখনও শুয়ে পড়ছে, এটা হত না।”
সিপিএম অবশ্য যাই বলুক, ভবানীপুরে উপনির্বাচন ঘোষণা হওয়ায় বঙ্গ বিজেপি যে একেবারেই সন্তুষ্ট নই, তা দৃশ্যত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন ছুড়ে জানতে চান, “আমরা চিন্তায় আছি। হঠাৎ ভবানীপুরেই কেন? তাহলে বাকি কেন্দ্রে কেন নয়?” রাজ্যের সহ-সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “বিজেপি চায় প্রত্যেক নির্বাচন। সে পৌর নির্বাচন হোক আর বিধানসভা ভোট। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যেভাবে বেছেবেছে নির্বাচন ঘোষণা করল, তা তামাশা ছাড়া কিছু নয়।” তৃণমূল যদিও ফুরফুরে মেজাজে ইতিমধ্যেই ভোটপ্রচারে নেমে গিয়েছে ভবানীপুরে। আরও পড়ুন: বাকি ৪ আসনে উপনির্বাচন কি পুজোর ছুটির পরে? বাড়ছে জল্পনা ও সম্ভাবনা