Dipankar Bhattacharya: সিপিএমের সঙ্গে ‘জোটটা’ হল কীভাবে? আসল কথা বলেই দিলেন দীপঙ্কর
Dipankar Bhattacharya: সিপিএম ও লিবারেশনের কাছাকাছি আসার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে বারবার বিজেপি ও তৃণমূলের তুলোধনাও করতে দেখা গেল তাঁকে। একইসঙ্গে করলেন আত্মসমালোচনাও। বললেন, “বিজেপির উঠে আসাটা বামপন্থীদের দুর্বলতার কারণে। আমি যখন এ কথা বলছি তখন আমার দলকে তারমধ্যে ধরেই বলছি।”
কলকাতা: নানা ইস্যুতে একযোগে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে। ছাত্র রাজনীতির আঙিনা থেকে কৃষক ফ্রন্ট, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু ‘জোট’ বেঁধে ভোটের ময়দানে লড়াই বঙ্গ বামেদের ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায়নি। কথা হচ্ছে সিপিএম ও সিপিআইএমএল লিবারেশন নিয়ে। এবারের ভোটে সেই ছবিই দেখা যাচ্ছে। তা নিয়েই চর্চা তুঙ্গে। নৈহাটিতে উপনির্বাচনে বামফ্রন্টের সমর্থনে লড়ছেন সিপিআইএমএল প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার। কিন্তু, বাম শিবিরের হলেও বামফ্রন্টে দেখা যায়নি লিবারেশনকে, আদর্শগত দিক থেকেও রয়েছে অনেকটা ফারক। কিন্তু সেই সিপিএম কংগ্রেসের হাত ছেড়ে এবার হাত ধরেছে লিবারেশনের। কী করে সম্ভব হল এই ‘সমঝোতা’? তাহলে কী অচিরেই বদলে যাবে বাংলার বাম রাজনীতির সমীকরণ? শীঘ্রই দেখা যাবে নতুন বাম বিকল্প? প্রশ্ন ঘুরছে নাগরিক মহলে। এ নিয়েই টিভি-৯ বাংলা ডিজিটালের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ এডিটর নির্ণয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বললেন সিপিআইএমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
‘সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত’
যদিও দীপঙ্করবাবু মনে করছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। খানিক অতীত মনে করিয়ে বললেন, “একুশের নির্বাচনে বামফ্রন্টের দখলে থাকা ২৪ আসনে ওদের সমর্থন করেছিলাম। আমি নিজে সায়নদীপের হয়ে প্রচারে গিয়েছিলাম। কিন্তু, এই প্রথম সিপিএম আমাদের সমর্থন করল। আমার মনে হয় সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তবে দুই ‘ভাইয়ের’ কাছাকাছি আসার পিছনে আরজি করের আন্দোলনকেই ‘ধন্যবাদ’ দিতে চাইলেন লিবারেশনের শীর্ষ নেতা।
বলছেন, “আমার মনে হয় এর নেপথ্যে আরজি করের আন্দোলন একটা বড় ভূমিকা পালন করছে। আমি তো এটাকে গণজাগরন বলি। গোটা দেশ তথা রাজ্যের জন্য অভূতপূর্ব আন্দোলন এটা। আর সেই প্রেক্ষাপটে এবারের উপনির্বাচন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। যে সময়ে এই নির্বাচন হচ্ছে তা আসলে আন্দোলন চালাকালীন মানুষকে এটা আলাদা সুযোগ দিচ্ছে। মত প্রকাশের সুযোগ দিচ্ছে। এই আন্দোলন একইসঙ্গে মহিলাদের আন্দোলন, নিরাপত্তার আন্দোলন, ডাক্তারদের আন্দোলন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, রোগীদের আন্দোলন।” তাঁর মতে আরজি কর শিখিয়েছে কীভাবে শাসকের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করতে হয়, কীভাবে গড়ে তুলতে হয় জন আন্দোলন। তাঁর কথায়, “অনেক সময় শাসকদল ভুলে যায় গণতন্ত্রটা পাঁচ বছরে একটা নির্বাচনের ব্যাপার নয়। গণতন্ত্র একটা সর্বকক্ষণের, প্রতিদিনের অধিকারের ব্যাপার। একটা সরকার যখন জনগণকে পরোয়া করে না, নেতারা যেটা মনে করছে সেটাই শেষ কথা, সেই সময় কীভাবে শাসকের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করতে হয় তা এই আন্দোলন দেখিয়েছে। ফলে আন্দোলনের বিরাট সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে পশ্চিমবাংলায় বামপন্থীদের জীবন্ত একটা বড় ঐক্য দরকার। পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও ইস্যুই তো এখন এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এই আন্দোলন রাজনীতির একটা নতুন ভাষা, নতুন এজেন্ডা গড়ে দিয়েছে।”
কোন দিকে যাচ্ছে বাম রাজনীতির লাল স্রোত?
তবে সিপিএম ও লিবারেশনের কাছাকাছি আসার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে বারবার বিজেপি ও তৃণমূলের তুলোধনাও করতে দেখা গেল তাঁকে। একইসঙ্গে করলেন আত্মসমালোচনাও। বললেন, “বিজেপির উঠে আসাটা বামপন্থীদের দুর্বলতার কারণে। আমি যখন এ কথা বলছি তখন আমার দলকে তারমধ্যে ধরেই বলছি। তবে বাংলায় নির্বাচনী ময়দানে আমাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি কোনওকালেই থাকেনি। উপস্থিতি থেকেছে সিপিএম, অন্যান্য বাম দলের। সিপিএম তো ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেছে। যা বিরাট ব্যাপার। কিন্তু, সেই ভারসাম্যটা পাল্টে গিয়েছে। এই অবস্থার বদল আনতে গেলে বামপন্থীদের উঠে আসতে হবে।” তবে কী ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগেই দেখা যাবে বৃহত্তর বাম জোট? দীপঙ্করবাবুর কথায়, “অবস্থা বদলাতে অবশ্য়ই একটা বৃহত্তর বামপন্থী সংগ্রামী ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া সম্ভব নয়। বাংলায় প্রচুর বাম মনষ্ক মানুষ আছেন। যাঁরা কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা কেন এটা চান। এই ঐক্যের পক্ষে বরাবর সওয়াল করেছেন।” অর্থাৎ ইঙ্গিত দিলেন, উত্তর দিলেন না সরাসরি। এখন দেখার বাম রাজনীতির লাল স্রোত শেষ পর্যন্ত কোনদিকে গড়ায়।