কলকাতা: বাংলায় প্রাত্যহিক জীবনের একটা অন্যতম অঙ্গ লোকাল ট্রেন। স্টেশনে স্টেশনে ভিড়, হকারদের রকমারি জিনিসের পসরা- এ গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ আর স্বাভাবিক ছন্দে চলছে না জীবন। বৃহস্পতিবার থেকেই সেই ছন্দ পতন। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী আজ থেকে আর ঘুরবে না লোকাল ট্রেনের চাকা। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার অন্যতম ভরসা এই লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, হতাশ অনেকে্ই। তবে সংক্রমণ আর মৃত্যু মিছিল রুখতে আর কোনও উপায় ছিল না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত বছর সম্পূর্ণ লকডাউন জারি হওয়ার সময়ও বন্ধ ছিল সব ট্রেন। সে সময়েও সমস্যায় পড়েছিলেন নিত্যযাত্রী থেকে হকার প্রত্যেকেই। বছর ঘুরে আবার সেই নির্দেশিকার পুনরাবৃত্তি। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ নেওয়ার পরই রাজ্যের জন্য একাধিক নয়া নির্দেশিকা ঘোষণা করেন। তিনি আজ, বৃহস্পতিবার থেকে লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার কথা জানান। লকডাউন না হলেও ভিড় রুখতে এই লোকাল ট্রেন বন্ধ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু পেটের দায়ে যে সব মানুষকে সকাল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়, তাঁদের কাছে দ্বিতীয় উপায় খোঁজা আবশ্যক। আর তারই ছবি দেখা যাচ্ছে বাস ডিপোগুলোতে। কার্যত লাইন দিয়ে বাসে উঠছেন সাধারণ মানুষ। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও কলকাতাতেও ধরা পড়েছে এই একই ছবি।
এ দিন সকাল থেকে ধর্মতলা বাস টার্মিনালে দেখা গেল যাত্রীদের ভিড়। বহু মানুষ যাঁরা এই লোকাল ট্রেনের ওপর নির্ভর করে কলকাতায় আসেন এবং বাড়ি ফেরেন তাঁরা ্এ দিন সকালবেলায় বাধ্য হয়ে বাসে ওঠার জন্য বাস স্ট্যান্ডে হাজির হন। যদিও লোকাল ট্রেন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মেনে নিচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। হাওড়া গামী হাওড়া- মেচেদা বাসস্ট্যান্ডেও একই ছবি। সকাল থেকে লম্বা লাইন। প্রচুর মানুষের ভিড়, দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে গাদাগাদি করে বাসে উঠছেন যাএীরা । এ ভাবে গাদাগাদি করে বাসের মধ্যে যাওয়ার ফলে করোনার প্রকোপ আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন বাসযাত্রীরা। কিন্তু তাঁদের কিছু করার নেই।
অন্য দিকে, বাসও নেই পর্যাপ্ত। গতকালই মমতা ঘোষণা করেছেন সরকারি বাস ও মেট্রোর সংখ্যা অর্ধেক করে দেওয়া হবে। ফলে বাসের সংখ্যা তুলনায় কম। আর এতেই ভয় বাড়ছে আরও। একসঙ্গে বাসে এত মানুষ যাত্রা করলে কী ভাবে কমবে সংক্রমণ? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: বন্ধ লোকাল ট্রেন, আজ থেকে আর কোন কোন নিয়ম জারি রাজ্যে
অন্য দিকে, ট্রেন নেই তাই যাত্রীও নেই। ফাঁকা স্টেশনে হকারদের জীবিকা প্রশ্নের মুখে। কেউ বলছেন, ‘এ ভাবে চলতে থাকলে আত্মহত্যা করতে হবে’, আবার কেউ বলছেন, ‘আমাদের দিকে সরকার একটু দেখুক।’ কেউ বিক্রি করেন ঝাল-মুড়ি, কারও কাছ থেকে সংবাদপত্র কিনে যাত্রা শুরু করেন যাত্রীরা। আজ থেকেই স্তব্ধ সেই চেনা কোলাহল।