কলকাতা: সমাজের যা কিছু কুসংস্কার, অশুভ তা বিনাশে একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে শিক্ষাই। সমাজ যদি শিক্ষার হাত ধরে এগিয়ে চলে, তাহলে সে সমাজের অগ্রগতি হতে বাধ্য। আর এই কর্মযজ্ঞে আরও বেশি করে মেয়েদের যুক্ত করতে উদ্যোগী হচ্ছে চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ বা ক্রাই (CRY)। তাদের বক্তব্য, মেয়েদের স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ হলে তবেই দেশের উন্নতি। আর তাই দেশজুড়ে সচেতনতা অভিযান শুরু করছে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এই সংস্থা।
শিশুদের আবশ্যিক ও অবৈতনিক শিক্ষার অধিকার আইন (রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট) ২০০৯-এর প্রতিশ্রুতি ছিল, ৬-১৪ বছর বয়সি শিশুদের বাধ্যতামূলক শিক্ষার আওতায় আনা হবে। গত দেড় দশকে সেই লক্ষ্যে অনেকটাই এগোনো গিয়েছে। ২০২০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির ঘোষণায় বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকারকে ১৮ বছর বয়ঃসীমা পর্যন্ত বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে।
তবে সরকারি তথ্য বলছে, শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার ১৫ বছর পূর্তিতেও দেশের সব শিশুর কাছে, বিশেষত মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার অধিকার পৌঁছে দেওয়া যায়নি। গত কয়েক বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার অনেকটা বাড়লেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের স্কুলছুটের ছবিটা একেবারেই উৎসাহব্যঞ্জক নয়। ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন-এর (ইউডাইস প্লাস) ২১-২২ সালের তথ্য অনুসারে দেশের প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে মাত্র তিনজন উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছয়।
বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে, শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের অন্যতম প্রধান স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রাই – চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ জাতীয় স্তরে একটি প্রচার কর্মসূচি শুরু করার কথা ঘোষণা করেছে। ক্রাই-এর তরফে জানানো হয়েছে, ২৪ জুন দেশের ২০টি রাজ্যে ‘পুরি পড়াই দেশ কি ভালাই’ (Poori Padhai, Desh Ki Bhalai) নামে এই জনসচেতনতা অভিযান শুরু হবে। চলবে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত।
দেশের প্রতিটি মেয়ে যাতে অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও উদ্যোগ গড়ে তোলাই এই অভিযানের লক্ষ্য। মেয়েদের স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ হলে তা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের পক্ষে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নতির পক্ষে কতটা সহায়ক হতে পারে, মানুষকে তা বোঝাতেই এই কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে ক্রাই তার সহযোগী সংস্থাগুলিকে নিয়ে রাজ্যে-রাজ্যে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করার কাজও চালিয়ে যাবে। চলবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও স্থানীয় প্রশাসনের পদাধিকারীদের উদ্যোগী করে তোলার কাজও।
এই অভিযানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ক্রাই-এর সিইও তথা কর্ণধার পূজা মারওয়াহা বলেন, “মেয়েদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই হোক বা দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা, মেয়েদের স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ করার মাধ্যমেই তা বাস্তবায়িত হতে পারে। এর জন্য দরকার জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া, মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার বাড়ানোর পাশাপাশি খেয়াল রাখা যাতে তারা কোনও কারণে স্কুলছুট হয়ে না যায়। অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারে। এর জন্য চাই মেয়েদের শিক্ষায় নীতিগত অগ্রাধিকার, যথাযথ অর্থের সংস্থান, সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে উদ্যোগী হওয়া এবং সর্বোপরি দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা।”
এই সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমাজের সকল স্তরের মানুষ ক্রাই-এর এই অভিযানের প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। মেয়েদের স্কুলশিক্ষা সম্পূর্ণ হলে তা কীভাবে সমাজকে সামগ্রিক উন্নতির পথে এগিয়ে দিতে পারে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ক্রাই-এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার অধিকর্তা তৃণা চক্রবর্তী বলেন, “মেয়েদের স্কুলশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে তা দারিদ্র দূরীকরণে সহায়ক হতে পারে। মেয়েরা ভবিষ্যতে পেশাগত ক্ষেত্রে প্রবেশ করলে তারা একদিকে যেমন পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতির অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন, তেমনই তাদের পরবর্তী প্রজন্মও অনেক বেশি সুস্থ, সক্ষম ও শিক্ষিত জীবনের নিশ্চয়তা পেতে পারে। সেই দিক থেকে দেখলে, ক্রাই-এর এই অভিযান একটা সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে নিশ্চিয়তার পদক্ষেপ।”