Kanhaiya Kumar: কানহাইয়া কি ‘অপরচুনিস্ট’? অফার দিল তৃণমূলও

TV9 Bangla Digital | Edited By: সৌরভ পাল

Sep 27, 2021 | 6:13 PM

Kanhaiya Kumar: সতীর্থ থেকে বিরোধী, বাম থেকে ডান, সংশয় থেকে সম্ভবনা — কানহাইয়ার কংগ্রেসে যাওয়া নিয়ে কে, কী বলছেন? কী-ই বা চাইছেন?   

Kanhaiya Kumar: কানহাইয়া কি অপরচুনিস্ট? অফার দিল তৃণমূলও
গ্রাফিক্স: অভিজিৎ বিশ্বাস

Follow Us

কানহাইয়া কুমার — একুশ শতকের ‘বামাবতার’। জন্ম, ভারতের ‘লেনিনগ্রাদ’ বেগুসরাইয়ে। মায়ের বাবা ছিলেন ‘গান্ধীবাদী’, কংগ্রেস কর্মী। বাবার বাবা আবার উল্টোপথের পথিক। ‘বিপ্লববাদী’, ছিলেন অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। কানাহাইয়ার বাবা জয় শঙ্কর সিং কৃষিজীবী মানুষ। বরাবরই লেনিনপন্থী। তবে দুর্বলতা ছিল লিবারেশনের প্রতিও। মা মীনা দেবী অঙ্গনওয়ারি কর্মী। অগ্রজ মনিকান্ত। অনুজ প্রিন্স। একমাত্র বোন জুহি। কানহাইয়া সহদরদের মধ্যে মেজো।

প্রাথমিকে হাতেখড়ি মসনদপুরের মধ্য বিদ্যালয় থেকে। পরে বারাউনির আর কে সি থেকে মাধ্যমিক। উচ্চ মাধ্যমিক মোকামার রাম রতন সিং কলেজ থেকে। ২০০৭ সালে পটনার কলেজ অব কমার্স, আর্ট ও সায়েন্স থেকে ভূগোলে স্নাতক। ফার্স্ট ডিভিশনে উত্তীর্ণ কানাহাইয়ার স্নাতোকত্তর লেখাপড়া হয় নালন্দায়। সেখান সমাজবিদ্যায় এম.এ। ২০১১ সালে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আফ্রিকান স্টাডিজের উপর উচ্চশিক্ষা। ‘দ্য প্রসেস অব ডিকলোনাইজেশন অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন ইন সাউথ এশিয়া’ — উল্লেখিত বিষয়ের উপর রয়েছে পিএইচডি।

ছেলেবেলায় আইপিটিএ। ছাত্রবেলায় এআইএসএফ। যৌবনকালে জেএনইউয়ের সংসদ নির্বাচনে প্রেসিডেনশিয়াল ক্যানডিডেট এবং জয়ী হওয়া — এ পর্যন্ত আপসহীন শ্রেণিসংগ্রামের প্রশ্নে কানহাইয়ার রাজনৈতিক চলাচল ছিল একেবারে সরল রৈখিক এবং উর্ধ্বমুখী। কানহাইয়ার জীবনে ‘জিলেপি বাঁক’ নিয়ে এল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ‘আফজল গুরু মৃত্যুবার্ষিকী পালন’। অভিযোগ, স্লোগান ওঠে, ‘আফজল হাম শরমিন্দা হ্যায়/তেরে কাতিল জিন্দা হ্যায়।’ দেশদ্রোহিতার অভিযোগ ওঠে বাম সংগঠনের বিরুদ্ধে, অভিযুক্ত হন খোদ কানহাইয়া কুমার।

তারপর… ১৫ দিনের কারাবাস। আর তারও পরে ‘বিহার টু তিহার’ এবং এক খনিকের ‘অগ্ন্যুৎপাত’। দেশব্যাপী বামছাত্র আন্দোলনে হিল্লোল তুলে এককাট্টা বিজেপি ও মোদী বিরোধিতার তুফান তোলেন কানহাইয়া। বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। জনসভা থেকে বিতর্কসভা — কানহাইয়া হয়ে ওঠেন পোস্টার বয়। মেঠো ভাষায় ঝাঁঝালো বক্তৃতা। চোখা চোখা প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর। প্রশ্নবানে সরকারকে রক্তাক্ত করে দেওয়া – কানহাইয়া প্রেমে মগ্ন হতে থাকে বাঁয়ে ঘেষা ‘বাম সমাজ’। ২০১৯ সালে বেগুসরাইয় থেকে সিপিআই প্রার্থীও হন তিনি। তবে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে প্রচার করে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত টানতে ব্যর্থই হন। দলের ভোট বাড়ে ঠিকই, কিন্তু বিজেপি প্রার্থী গিরিরাজ সিংয়ের কাছে হারেন কানহাইয়া।

লোকসভা পরবর্তী সময়ে দলে ছাত্রনেতার গুরুত্ব আরও বাড়ে। সিপিআই ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য করা হয় কানহাইয়াকে। একাধিক রাজ্যে দলের হয়ে প্রচারেও ঝড় তোলেন জেএনইউয়ের প্রাক্তনী। এহেন ‘একরোখা’ বাম ছাত্রযুব নেতাকে নিয়ে গুঞ্জন, ‘গান্ধী জয়ন্তীতে কংগ্রেসে যোগ দেবেন কানহাইয়া কুমার’। জল্পনার সূত্রপাতে কানহাইয়া কুমার ও রাহুল গান্ধীর বৈঠক। যদিও সিপিআইয়ের দাবি, কানহাইয়া দেশের জনপ্রিয় বাম নেতা। তিনি যেকোনও অবিজেপি বিরোধী শক্তির নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতেই পারেন। আরও একধাপ এগিয়ে ডি রাজার দাবি, “কানহাইয়া দলের সম্পদ, ও কোথাও যাচ্ছে না।” যদিও যাকে নিয়ে জল্পনা, সেই কানহাইয়ার মুখেই কুলুপ।

বাংলা ৩ দিনের সিদ্ধান্তে দলবদল দেখেছে। অক্টোবর ২ আসতে এখনও সপ্তাহখানেক বাকি। বিহারে ‘দলবদলের’ আগে বঙ্গে এবার বামনেতাকে নিয়ে আলোচনা। সতীর্থ থেকে বিরোধী, বাম থেকে ডান, সংশয় থেকে সম্ভবনা — কে, কী বলছেন? কী-ই বা চাইছেন?   

 

সৈকত গিরি (রাজ্য সম্পাদক, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন)

কানহাইয়া একদিন দু দিনের সিপিআই কর্মী নয়। বামপন্থী ঘরানার ছেলে। ছেলেবেলায় বিতর্কসভায় প্রথম হয়ে এবি বর্ধনের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছে। মা অঙ্গনওয়ারির কর্মী। বাবা পার্টি সদস্য। ওঁর কাকা আমাদের পার্টির নেতা। কানহাইয়ার যেখানে জন্ম, বেগুসরাইকে বলা হয় ভারতবর্ষের লেনিনগ্রাদ। দল পরিবর্তন করলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হবে না। বামপন্থীরা যে শুধু ফ্যাসিস্ট বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে তা নয়, কংগ্রেসের নীতির বিরুদ্ধেও একইভাবে লড়াইয়ে রয়েছে। এটা ঠিক, বর্তমান সময়ে ধর্মীয় মেরুকরণের প্রশ্নে বিজেপিই আমাদের প্রথম শত্রু।

কংগ্রেসের বিরুদ্ধে শ্রেণি সংগ্রাম আমাদের দীর্ঘদিনের। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে বোঝাপড়া করে দলবদল করলে শুধু আমাদের ক্ষতিই হবে না, গোবলয় থেকে উঠে আসা এক ইয়ুথ আইকনের চলে যাওয়ায় বাম আন্দোলনও ধাক্কা খাবে।

সৈকত গিরি, AISF নেতা

একজন কমিউনিস্ট আর একজন অপরচুনিস্টের মধ্যে পার্থক্য আছে। জেএনইউ (জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে উঠে আসা ছাত্রনেতারা স্রোতে গা ভাসায় না। কংগ্রেস জমানায়ও হয়নি। শ্রেণিসংগ্রামের প্রশ্নে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও লড়ব। আমার বিশ্বাস, কানহাইয়া কুমার অপরচুনিস্ট নয়। হতে পারে, প্রশান্ত কিশোর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার টোপ দিচ্ছে। বামপন্থীরা সমাজ বদলের কথা বলে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করে না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কানহাইয়ার কংগ্রেসে যাওয়ার খবর গুজব। পার্টি নেতৃত্ব কানহাইয়ার উপর ভরসা করছে। আমার বিশ্বাস কানহাইয়া যাবে না।

 

আশুতোষ চ্যাটার্জি (ছাত্র পরিষদের নেতা)

পলিটিক্স ইজ অল অ্যাবাউট পসিবিলিটিস। কানহাইয়া নিজের ইচ্ছায় কংগ্রেসে আসছেন। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে সারা দেশের ইয়ুথ একত্রিত হচ্ছে। দেশের দিশারী যারা, সেই যুবসমাজ কংগ্রেসে আসছে। শুধু কানহাইয়া কুমারই নন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক যুবনেতা ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে এক ছাতার তলায় আসছেন।

আশুতোষ চ্যাটার্জি, ছাত্র পরিষদের নেতা

 

দেবাংশু ভট্টাচার্য (মুখপাত্র, তৃণমূল)

বঙ্গজ বামের এবার আয়নার সামনে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে বামেদের আর কেউ বিশ্বাস করছে না। বিশ্বস্ত মানুষও বেরিয়ে আসছেন। আমি মনে করি কানহাইয়ার মতো মেধাবী, শিক্ষিত মানুষের উচিত এমন একটি শক্তির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করা যেখানে তাঁর শ্রেষ্ঠ ব্যবহার হয়। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং বিজেপি বিরোধিতার একমাত্র আপসহীন প্ল্যাটফর্ম তৃণমূল। কংগ্রেস কোনওদিনই আপসহীন সংগ্রাম করতে পারেনি।

দেবাংশু ভট্টাচার্য, তৃণমূল মুখপাত্র

রাহুল গান্ধী একদিন মিটিং করলেন, খাটিয়ায় বসে চা খেলেন সেভাবে রাজনীতি হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো স্ট্রিট ফাইটিং করতে হবে। সুস্মিতা দেবের মতো নেত্রী তৃণমূলে এসেছেন। কানাহাইয়াও চাইলে অ্যাপলিকেশন জমা দিতে পারেন।

আরও পড়ুন: দলে ‘দমবন্ধ’ হয়ে আসছে কানহাইয়ার! রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাতেই উসকে দিল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জল্পনা

Next Article