কলকাতা : ফের বাংলার দুয়ারে দিল্লির দূত? পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat election) আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা রূপায়ণে পাই পয়সার হিসেব বুঝে নিতে নবান্নের কাজে নজরদারি বাড়াতে চলেছে মোদী সরকার। আবাস যোজনার (PM Awas Yojona) হাল যাচাই করতে বাংলার গ্রাম সফরে এসে কঠোর মনোভাবই দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিদর্শক দল। প্রথম দফায় মালদা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের সফর সদ্য মিটেছে। দিল্লি ফিরে ওই টিমের সদস্যরা কী রিপোর্ট দেন তা নিয়ে নবান্নের মাথা ব্যথার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের অফিসার দের বিস্তারিত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বাকি জেলাগুলিতেও পরিদর্শক দল পাঠানো হবে কিনা তা নিয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল আছে। শনিবার সেই চর্চায় ইন্ধন জুগিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, শীঘ্রই আরও পনেরো জেলায় আবাস পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে আসবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের নতুন টিম।
সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন শুভেন্দু এবং বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার কিছুদিন পরেই রাজ্যে আবাস যোজনা খতিয়ে দেখতে আসে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পরিদর্শক দল। তাদের প্রথম দফার পরিদর্শনকে কেন্দ্র করেই তৃণমূল-বিজেপি রাজনৈতিক তরজার এক প্রস্থ দেখে ফেলেছে বাংলার মানুষ। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াতেই কেন্দ্রের নজরদারি সুলভ আচরণের প্রতি বিরক্তি স্পষ্ট হয়েছে। দিল্লি থেকে একশোদিনের কাজের টাকা না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে।
১০০ দিনের কাজের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তৃণমূল সমর্থকরা। পরের দিন পথের বাধা এড়াতে আচমকা রুট বদলের কৌশল পর্যন্ত নিতে হয়েছে পরিদর্শক দলের সদস্যদের। যা দেখে রাজ্য প্রশাসনের উপর মহলের ধারণা, আবাস নিয়ে পঞ্চায়েত দফতরের রিপোর্টের সঙ্গে কেন্দ্রীয় টিমের চোখে দেখা অভিজ্ঞতা মিলিয়ে দেখতে চায় গিরিরাজ সিংহের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। সেক্ষেত্রে রাজ্যের আরও কিছু জেলায় আধিকারিকদের পাঠিয়ে সমীক্ষা চালাতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।
এরই মধ্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আবাস যোজনায় কেন্দ্রের দেওয়া টাকার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার না হলে বরাদ্দ ফিরিয়ে নেওয়া হবে। জেলাগুলি অবশ্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আবেদনকারীদের তালিকা থেকে বহু নাম ছেঁটে ফেলে আবাস যোজনায় ব্যাপক শুদ্ধকরণের নজির গড়তে চেয়েছে। এদিকে চূড়ান্ত তালিকায় দলমত নির্বিশেষে গরিব মানুষকে ঠাই দেওয়াই মূল লক্ষ্য কেন্দ্রের। আর সেই লক্ষ্যেই রাজ্য সরকারের উপর লাগাতার চাপ বজায় রাখতে চায় দিল্লি। পঞ্চায়েত ভোটে গ্রামীণ বাংলায় এর রাজনৈতিক ফসল তোলার চেষ্টায় শুভেন্দু সুকান্তরা। যদিও ব্রাত্য বসুর মতো মন্ত্রীর দাবি, দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলেরই জয়জয়কার হবে। ব্রাত্যবাবুরা যতই আত্মবিশ্বাসী হন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার অবশ্য জেলা সফরে বেরিয়ে পড়েছেন আবাসের খতিয়ান নিতে। কেন্দ্রীয় পরিদর্শকদের নতুন দল আসার ইঙ্গিত রাজ্যের কাছেও থাকতে পারে বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।