কলকাতা: কলকাতা পুরসভার (KMC) বিএল সাহা রোডের ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একাধিক বাড়িতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। এমনও বাড়ি রয়েছে যেখানে তিন সদস্য এক মাসের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে এলাকার বাসিন্দাদের।
মাত্র ৩৬ বছর বয়স এলাকার বাসিন্দা দীপালি দত্তের। ষষ্ঠীর দিন ডেঙ্গু প্রাণ কাড়ে তাঁর। এরপরই ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে এলাকার লোকজনের মধ্যে। পুর পরিষেবাকে কাঠগড়ায় তোলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিষয়টি পর শুক্রবারই কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ দল এই ওয়ার্ড পরিদর্শনে আসে। যার নেতৃত্বে ছিলেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস।
দেবাশিসবাবুর সঙ্গে ছিলেন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। তাঁরা এলাকায় রাসায়নিক স্প্রে করেন। দেবাশিসবাবু বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে কোথাও জল জমা রয়েছে কি না তা দেখেন। একটি বাড়িতে ঢুকে সেখানকার জমা জলের মধ্যে ডেঙ্গু মশার লার্ভা পান। এ ছাড়াও একাধিক বাড়িতে পরিত্যক্ত একাধিক সামগ্রীতে জমা জল থাকতে দেখেন। সেগুলিকে দ্রুত পরিষ্কার করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
তবে এই একদিনের পরিদর্শনেই যে আতঙ্ক উধাও হবে না তা বোঝা যায় এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। যে বাড়ির সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, সেই আবাসনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর দীপালি দত্ত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁকে এলাকার চিকিৎসককেও দেখানো হয়। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ষষ্ঠীর দিন তাঁর মৃত্যু হয়।
দীপালি দত্তের পরিবারের সদস্যদের দাবি, ওই আবাসনে প্রতিটি ঘরেই ডেঙ্গু থাবা বসিয়েছে। দীপালি দত্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা চলছিল। এরই মধ্যে মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয়। এলাকার লোকজনের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের আশপাশের অপরিচ্ছন্ন অবস্থার জন্য এই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের জমা জলের জেরে মশার বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে।
এদিন কলকাতা পুরসভার বিশেষ দল ওই নির্মীয়মাণ বহুতলে গিয়ে দেখে, বেসমেন্টে নোংরা জল জমে রয়েছে। আশপাশের অবস্থা অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন। সেখান থেকে যে মশার প্রকোপ বাড়ছে তা মেনে নিয়েছেন বিশেষ দলের নেতৃত্বে থাকা দেবাশিস বিশ্বাস। তিনি নির্মীয়মাণ বহুতলে যে সংস্থা কাজ করছে, সেখানকার আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, আগামী চার দিনের মধ্যে যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করা হয়, তাহলে ওই বহুতল নির্মাণ বন্ধের নোটিশ দেওয়া হবে পুরসভার তরফে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই নির্মীয়মাণ বহুতল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ জারি করা বলা হয়েছিল চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য। তার পরেও এই অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। তবে এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, নোটিশ দেওয়ার পরেও কেন এত অপরিচ্ছন্ন? কেন কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে গেলেন না? কেন পর্যাপ্ত নজরদারি নেই? যদিও এদিনই কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতায় ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া নিয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছি। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া শূন্য করতে হবে এ শহরকে।
আরও পড়ুন: Gariahat Double Murder: কাঁকুলিয়াকাণ্ডে গ্রেফতার আরও দুই, এখনও অধরা মিঠুর ছেলে