কলকাতা : বৃষ্টি কমেছে, কিন্তু ডেঙ্গি আতঙ্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না কলকাতাবাসীর। গত কয়েক মাস ধরেই হু হু করে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। এবার ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার অনির্বাণ হাজরার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪২ বছর। বেলেঘাটা আইডি-তেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, এরপরই মৃত্যু হয় তাঁর।
গত পাঁচদিন আগে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন অনির্বাণ হাজরা। গত বুধবার তাঁর শরীরে প্লেটলেটের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৬০ হাজার। ঠিক একদিন পরই বৃহস্পতিবার, তাঁর প্লেটলেটের পরিমাণ কমে ১৬ হাজার হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবার সকালে তাঁর আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চিকিৎসকদের সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
জানা গিয়েছে, এর আগে কোভিড সংক্রমণেও গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি। কোভিডের কারণেই ডেঙ্গিতে অসুস্থতা বেশি হল? এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকেরা। কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর যোগ থাকার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। কোভিড সংক্রমণে শরীরে যে প্রভাব পড়েছে, তার ফলেই ডেঙ্গির সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা কমেছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও এ ব্যাপারে কোনও সমীক্ষা করা হয়নি।
এই ঘটনার পর বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষা নবনীতা ভট্টাচার্য বলেন, ডেঙ্গিকে হালকা ভাবে নেবেন না। পোস্ট কোভিড মায়োকার্ডিটিস-ও একটা কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন অধ্যক্ষা।
উল্লেখ্য, অনির্বাণ হাজরার বাবা হাওড়ার সাঁকরাইলে সিপিএমের সাতবারের বিধায়ক ছিলেন। অনির্বাণ ছাত্র সংগ্রামের সম্পাদক ছিলেন। অনির্বাণ সিপিএমের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। ২০০৬ সালে ১১৩ ভোটে তৃণমূল প্রার্থী শীতল সর্দারের কাছে পরাজিত হন তিনি। তাঁর স্ত্রী তমসা হাজরা হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক। বাগনান সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত। বামপন্থী পরিবারের সদস্য অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের দেহ এদিন এসএফআই-এর রাজ্য অফিসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে দেহ যাবে সাঁকরাইলের নলপুরের বাড়িতে।
এই ঘটনার পর ডেঙ্গি পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘সমবেদনা জানাচ্ছি। তবে, মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’ তাঁর দাবি, যে বিরোধীরা এই ইস্য়ুতে সরব হয়েছেন, তাঁদের রাজ্যেও ভয়ঙ্কর হারে ডেঙ্গি হচ্ছে, তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে অনেক বেশি।