কলকাতা: গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। করোনার দৈনিক সংক্রমণ বাড়ছে, সঙ্গে ওমিক্রনের চোখরাঙানি। দিলীপের কটাক্ষ, “যেখানে অন্য সব রাজ্যে সব অনুষ্ঠান বাতিল করছে, সেখানে আমাদের রাজ্যে ঢিলেঢালা।”
বৃহস্পতিবার নিউটাউনে প্রাতঃভ্রমণের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দিলীপ ঘোষ। গঙ্গাসাগর মেলার ক্ষেত্রে তিনি কুম্ভমেলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “কুম্ভমেলা বিশ্বের বৃহত্তম মেলা। সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করলেও কেউ মানে না। তাই রাজ্যের উচিৎ সার্বিক বিষয় বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
দিলীপের সংযোজন, “রাজ্যে এই মুহূর্তে ভয়ের পরিবেশ। অন্য রাজ্য সব উৎসব অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। আমাদের রাজ্য ঢিলেঢালা। কোভিডের কারণে কুম্ভমেলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না যায় তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কিন্তু কখনও আগে থেকে সচেতন হয় না রাজ্য প্রশাসন।”
গঙ্গাসাগর নিয়ে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে রাজ্য সরকার। কোভিডকালে কীভাবে সংক্রমণ প্রতিহত করা যায় সেদিকেই বিশেষ নজর রাজ্য সরকারের। পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের পুণ্য অর্জনে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে প্রশাসনের। ওমিক্রন উদ্বেগেই গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতিকে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স এমনকী দাহঘাটের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে গঙ্গাসাগরে।
জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মেলা চত্বরে ১৯১০ টি শয্য়া সম্পন্ন ১৩ টি হাসপাতাল, ৫ টি আইসোলেশন ওয়ার্ড, ২৩৫ টি শয্যা সম্পন্ন ৪ টি সেফ হোম, ৫০০ টি শয্য়া সম্পন্ন কোভিড হাসপাতাল, কাকদ্বীপ চত্বরে ৬ টি দাহঘাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উট্রামঘাট আর গঙ্গাসাগর দ্বীপের মধ্যে ১৩টি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। প্রত্যেক হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য থাকবে ২৫ টি অ্যাম্বুলেন্স। এ ছাড়াও থাকছে ৩টি ওয়াটার অ্যাম্বুল্যান্স ও ১টি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। কোনও রোগী গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে প়ড়লে থাকবে গ্রিন করিডোরের ব্যবস্থাও। শিশুদের জন্য থাকছে ৯২ টি শয্য়ার ব্যবস্থা। কাকদ্বীপ ও রুদ্রনগর হাসপাতালেও করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ শয্য়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তবে এখনই সাগরে নেমে স্নান করার ছাড়পত্র দেয়নি প্রশাসন। আপাতত ই-স্নানেই জোর দেওয়া হচ্ছে। সংক্রমণ প্রতিহত করতেই এই বিশেষ ব্যবস্থা বলে খবর সূত্রের। করোনা সংক্রমণ এড়াতে বেশ কিছু বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যেমন ই স্নান, সমুদ্রের জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে অস্থায়ী বাথরূম তৈরি করে স্নানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গতবারে ই-স্নান ঘিরে পুর্ণার্থীদের আকর্ষণ তুঙ্গে উঠেছিল। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে জেলা প্রশাসন পরিকল্পনা করছে স্নানের পরিবর্তে ড্রোনের মাধ্যমে আকাশ পথে জল ছিটিয়ে তীর্থ যাত্রীদের ‘শুদ্ধিকরণ’ করাবার ব্যবস্থা করা হবে।
জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ২০টির মতো ড্রোন নেওয়া হবে এই স্নান যাত্রার জন্য। মকর সংক্রান্তির দিন বিভিন্ন পাত্রে সমুদ্রের জল ভরে নিয়ে যাওয়া হবে কপিল মুনির মন্দিরে। সেখানে পুজো করে সেই পাত্র ড্রোনের সঙ্গে আটকে তা উড়িয়ে নিয়ে আসা হবে। একটি নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করে সেখানে পুণ্যার্থীদের জড়ো করে আকাশ থেকে স্নান করানোর ব্যবস্থা করা হবে। একেকবারে ১৫০ থেকে ২০০ জন পুণ্যার্থীকে এই পদ্ধতিতে স্নান করানো যাবে বলে আশা করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
আরও পড়ুন: Asansol Municipal Election: ‘পার্টি পার্টির মতোই চলবে, কারোর দিকে তাকাবে না’