কলকাতা: ত্রিপুরার আঁচ গিয়ে পড়েছে দিল্লিতে। ত্রিপুরায় সায়নী ঘোষের গ্রেফতারির প্রতিবাদে তৃণমূল- বিজেপি সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেন তৃণমূল সাংসদরা। বিভোক্ষ-স্লোগান-গান আর তার জোর বাড়াতে হাতহাতির তাল! সোমবার দিনভর উত্তপ্ত ছিল দিল্লি। কলকাতার চায়ে পে চর্চা অনুষ্ঠানে বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুুখে উঠে আসে সেই প্রসঙ্গ।
তৃণমূল সাংসদদের বিক্ষোভকে কটাক্ষ করে দিলীপ বলেন, “তৃণমূল সাংসদরা অমিত শাহের বাড়ি গিয়ে হাততালি দিচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে হাততালি কারা দেয়? জানেন তো?” দিলীপ ঘোষ একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে এসে তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।
তিনি বলেন, “তৃণমূল সাংসদরা গতকাল দিল্লিতে উত্তাল বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। গান গেয়েছেন, হাততালি দিয়েছেন, স্লোগান দিয়েছেন। দিলীপ ঘোষ একটা ইঙ্গিত করে কুরুচিকর মন্তব্য করলেন। যাঁদের ইঙ্গিত করে কুরুচিকর মন্তব্য করলেন দিলীপ, তাঁরাও আমাদের সমাজের অঙ্গ। তাঁদের জীবনেও বহু যন্ত্রণা রয়েছে। তাঁরা বহু কষ্ট করে একটা জীবিকা নির্বাহ করছেন। এরকম সস্তা, চটুল-করুচিকর মন্তব্য করে তাঁদের ছোটো করবেন না।”
দিলীপ ঘোষের উদ্দেশে কুণালের বক্তব্য, “দিলীপবাবু মানসিকতা বদলান। আমি এর তীব্র নিন্দা করি। আর সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছি, হাতহালি দিয়ে প্রতিবাদ, স্লোগান গণআন্দোলনের অংশ।” প্রসঙ্গ উত্থাপনে শুভেন্দু অধিকারীরও নাম দেন তিনি। বলেন, “দিলীপবাবু হাততালি দিয়ে প্রতিবাদে যদি ওই ধরনের চিন্তা মাথায় আসে, তাহলে যান আপনাদের নব্য সনাতনী শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে হাততালি দিয়ে নিজেকে সনাতনী প্রমাণে কীর্তন করেন, তাঁরও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরীক্ষা করে দেখুন! আপনার ইঙ্গিতটা সেদিকেও যেতে পারে!”
প্রসঙ্গত, রবিবার থেকেই সায়নী ঘোষের গ্রেফতারি নিয়ে চরম টানাপোড়েন ত্রিপুরাতে। তার আঁচ গিয়ে পড়ে কলকাতা-দিল্লিতেও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছিল তৃণমূল। তিনি সময় না দেওয়ায় বিক্ষোভ শুরু করেন সাংসদরা। নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসের ঠিক সামনে ধর্নায় বসেন তাঁরা। ত্রিপুরার আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতেই অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল তৃণমূল। নির্ধারিত সময়ের পরও সাক্ষাতের সময় না মেলায় ধর্নায় বসে তৃণমূল। ছিলেন সৌগত রায়, শান্তনু সেন, দোলা সেন, কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার সহ ১৬ জন সাংসদ। সেই বিক্ষোভকেই কটাক্ষ করতে চরম ভাষায় বিঁধলেন দিলীপ ঘোষ।
তৃণমূল সাংসদদের ধরনা নিয়ে সোমবারও ব্যঙ্গ করেছেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতির কটাক্ষ, ‘ওঁরা ওয়াশিংটনে যান, রাষ্ট্রপুঞ্জেও যেতে পারেন’। তৃণমূলের দিল্লি সফর নিয়ে দিলীপ বলেছিলেন, “দিল্লি যাক, অন্য কোথাও যাক। দুটো ঢিল পড়েছে, তাতে নাকি দিল্লি, রাষ্ট্রপতি! আর যদি একটু বাড়াবাড়ি হয় তাহলে কি ইয়োনোতে যাবেন? সেটা ভেবে দেখুন।”
সোমবার দীর্ঘক্ষণ ধরে নর্থ ব্লকে ধরনা চালানোর পর অবশেষে বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর (Amit Shah) সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পান তৃণমূল সাংসদরা (TMC MPs)। সোমবার বিকেল ৪ টের সময় তৃণমূল প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার সময় দেন অমিত শাহ। অমিত শাহ নিজের বাসভবনেই দেখা করেন তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে। সেখান অমিত শাহর কাছে ত্রিপুরা ইস্যুতে স্মারকলিপি জমা দেন তৃণমূল সাংসদরা। আপাতভাবে বৈঠক ফলপ্রসু বলেই ইঙ্গিত মিলছে। তৃণমূল সাংসদরা বৈঠক শেষে বেরিয়ে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, ত্রিপুরায় আর হিংসা হবে না।
অমিত শাহর এই আশ্বাসের পরেও যদি পরবর্তী সময়ে ফের ত্রিপুরায় কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়, তখন তাঁরা ফের সরব হবেন বলে জানিয়েছেন সাংসদরা।