কলকাতা: এসএসসি-র গ্রুপ ডি নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে কমিটি গড়ে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সিঙ্গল বেঞ্চের পরে এবার ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানাতে চলেছে রাজ্য। আজ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের তরফে আবেদন জানানোর কথা। সেখানে কি স্বস্তি মিলবে রাজ্যের?
এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ সোমবার এই নির্দেশ দেয়। মধ্য শিক্ষা পর্ষদের হলফনামার পর সিবিআইয়ের অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছে হাইকোর্ট। সিবিআই কমিটি গঠন করে এই অনুসন্ধান করুক চায় আদালত। এদিন ৫০০ জনের তালিকা জমা নিল আদালত। কবে তাঁরা নিয়োগ হয়েছেন, সেটা জানাতে হবে।
এদিন শুনানি চলাকালীন এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একের পর এক তিরষ্কার করেছেন। একদিকে রয়েছে কমিশন, অন্যদিকে বোর্ড। কমিশন যে সুপারিশ করেনি বলে বার বার দাবি করেছে, সোমবার হলফনামা দিয়ে বোর্ড জানাল কী ভাবে সেই সুপারিশ হয়েছিল। পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট জমা পড়েছে আদালতের কাছে। সফট কপি জমা পড়েছে, পেন ড্রাইভ দেওয়া হয়েছে। তার পরও কমিশন কী করে বলছে সুপারিশ করেনি, সে প্রশ্ন ওঠে এজলাসে।
এদিন মামলাকারীদের তরফে ৫০০ জনের নামের তালিকা তুলে দেওয়া হয় আদালতে। এদের নিয়োগ নিয়ম বহির্ভূত ভাবে হয়েছে বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে এদিন বোর্ডের পক্ষ থেকে হলফনামা জমা পরে। সেখানে বলা হয়, কমিশনের পক্ষ থেকে যে সুপারিশ এসেছিল তার সফট কপি আছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে। তারা গ্রুপ সি ও ডির নিয়োগ সেখান থেকেই করেছেন। পেন ড্রাইভে তার তথ্য আছে।
বিচারপতি জানতে চান, কমিশনের সুপারিশ যদি না-ই থাকে, তা হলে কার অদৃশ্য হাত এখানে রয়েছে? কার সুপারিশে ২৫ জন চাকরি পেলেন। দু’বছর হতে চলল তাঁরা সে চাকরি করছেন। পাশাপাশি বিচারপতি বলেন, এই ঘটনার জন্য তিনি ‘সিবিআই এনকোয়ারি’ চান। এর কারণ যে রাজ্য পুলিশে অনাস্থা —এমনটা নয়। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তিনি অসম্মান করতে চান এমনও নয়। যেহেতু এ ক্ষেত্রে একটা বড় ষড়যন্ত্র চলছে, মানুষের স্বার্থে তা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে কোথাও গিয়ে সিবিআইয়ের অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়। তাই তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কথা বলেছেন।
রাজ্যের পক্ষ থেকে আইনজীবী সম্রাট সেন বিচারপতিকে অনুরোধ করেন অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে এর তদন্ত হোক। কিন্তু সিবিআই নয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থার উপর আমাদের কোনও অসম্মান নেই। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকেও অসম্মান করছি না। কিন্তু অপরাধীরা রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় আশ্রয় পায়। চাকরির ক্ষেত্রে এটা মানা যায় না। শুধু জানতে চাই কী ভাবে এটা হল। যারা জড়িত তারা রাজনৈতিক দলের কোনও পদে আছেন কি না। নিয়োগ প্যানেল থেকে এদের সরিয়ে দেওয়া হবে।”
কমিশনের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, তৃতীয় এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করানো হোক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত কোথায় হতে পারে সেটা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে এজি গোপাল মুখোপাধ্যায় অনুরোধ করেন, সিবিআই হলেও কোনও বিশেষ টিম হাইকোর্ট দ্বারা তৈরি হোক। তারা তদন্ত করুক। তাও খারিজ করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে রাজ্যে গ্রুপ ডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেই মতো ১৩ হাজার নিয়োগ হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে সেই গ্রুপ ডি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়। তারপরেও একাধিক নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ২৫ জনের নিয়োগের সুপারিশের কথা জানা গিয়েছে। সেই তথ্য হাইকোর্টের হাতে আসে। কী ভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ নিয়োগ তালিকা থেকে নিয়োগ তারই কৈফিয়ত চায় হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: ‘সিপিএম নয়, আসল সর্বহারা তো বাবুল!’ বাবুল-দিলীপ দ্বৈরথের নয়া অধ্যায়