কলকাতা: মাস তিনেকের ব্য়বধান। ভোটের মুখে আবারও ‘খরচসাপেক্ষ’ দুয়ারে সরকার কর্মসূচি। প্রশাসন সূত্রই বলছে, এপ্রিলে ২০ দিনের কর্মসূচিতে মোট খরচ হতে পারে ২৫০ কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠছে যেখানে প্রাপ্যের দাবিতে দিনের পর দিন অনশন আন্দোলনে বসেছেন সরকারি কর্মীরা, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিচ্ছেন ডিএ দেওয়ার টাকা নেই, রাজ্যের কোষাগার ফাঁকা, সেইখানে দাঁড়িয়ে কীভাবে ২৫০ কোটির টাকার কর্মসূচি? রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছেই। তার উত্তর দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। গত ১ নভেম্বর রাজ্যে পঞ্চম দফার দুয়ারে সরকার শুরু হয়েছিল। দু’দফায় মেয়াদ বেড়ে তা চলে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছিল। এবার ১ এপ্রিল থেকে দু’দফায় হবে শিবির। প্রথম দফায় নেওয়া হবে আবেদনপত্র, দ্বিতীয় দফায় চলবে শংসাপত্র দেওয়া এবং সংশোধনের কাজ। তবে এবারে আরও একটি বিষয় উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারে নবান্নের তরফ থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলে দেওয়া হয়েছে, বুথ স্তরে করতে হবে দুয়ারে সরকারের শিবির।
জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, দুয়ারে সরকারের শিবিরে প্যান্ডেল করা, টেবিল-চেয়ারের ভাড়া, শিবির চালাতে লোক, তাঁদের সকাল দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা, প্রচারের একটা খরচ সব মিলিয়ে অঙ্কটা বেশ ভালই। লক্ষ লক্ষ তথ্য নথিবদ্ধ করার জন্য টাকা দিতে হয় ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের। জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, প্রতিটি বড় শিবিরে গড়পড়তা ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েই যায়।
পুরমন্ত্রী অবশ্য বলছেন অন্য কথা। তাঁর বক্তব্য, ওত টাকা খরচ হবে না। তিনি বলেছেন, “খরচ তেমন কিছু হয় না। কারণ বেশিরভাগ দিনই আমরা স্কুলে বা ছুটির দিনে যখন স্কুল বন্ধ থাকে বা ক্লাব অথবা কোনও সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেখানে সকালে কোন কাজকর্ম থাকে না, সেই জায়গাগুলো বেছে নিয়ে কাজকর্ম করে থাকি। আর একটু টেবিল চেয়ার পেতে নিই। আমাদের আধিকারিকরা রয়েছেন সেই কাজের জন্য। খুব যে টাকা পয়সা খরচ হয় তা নয়। স্থানীয় ছেলেরাই যাবতীয় কাজকর্ম করে থাকে।” তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের যেখানে যেখানে এই কর্মসূচি বা ক্যাম্প হয় সেখানে স্থানীয়দের সেই কারণেই যুক্ত করা হয়। সামান্য টিফিনের ব্যবস্থা থাকে। তার জন্য খুব একটা খরচ হয় না। তাহলে এত কথা কেন বলছেন বিরোধীরা?
ফিরহাদের কটাক্ষ, “আমাদের স্কিমগুলো নিয়ে বিরোধীরা বড়ই চিন্তিত এবং ভীত হয়ে রয়েছে। দুয়ারে সরকার হলে মানুষের ঘরে ঘরে পরিষেবা পৌঁছে যাবে বা গিয়েছে। সেটা নিয়েই চিন্তিত বিরোধীরা। এত অপপ্রচার সত্ত্বেও মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই। এটাই সমস্যা হচ্ছে।”
পরিসংখ্যা বলছে, রাজ্যে বুথ রয়েছে ৬১ হাজারের কিছু বেশি। আর রাজ্য সরকার ৮২ হাজারের বেশি শিবির করার পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে ৮২ হাজারের বেশি শিবিরে দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা কিন্তু পুরমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিল খাচ্ছে না। প্রশ্ন সেক্ষেত্রে থেকেই যাচ্ছে।