কলকাতা: ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, খুন- প্রতিদিন খবরের শিরোনামে। সমালোচনায় সরব বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে আরও ঘৃতাহুতি দিয়েছে সম্প্রতি দমদম লোকসভার তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের একটি মন্তব্য। তাঁর কথায়, “মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটিও ধর্ষণ লজ্জার।” সৌগতর এই মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে শাসক দল। দলের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় সৌগতর মন্তব্যকে সমর্থন করছে না তৃণমূল। এ প্রসঙ্গে TV9 বাংলায় এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে সৌগত বাবুর বিস্ফোরক উক্তি, “সর্বস্তর থেকে তো প্রতিবাদ হচ্ছে না। রাজনৈতিক ন্যারেটিভ স্পষ্ট কিন্তু সামাজিক ন্যারেটিভটা কোথায়? কে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলছে, এটার অভাব দেখা যাচ্ছে।” রাজ্যের বিভিন্ন ইস্যুতে নাগরিক সমাজের নীরব ভূমিকা নিয়েও কটাক্ষ করেন সৌগত রায়।
বগটুই থেকে হাঁসখালি, নানা ইস্যু নিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের চুপ থাকার অভিযোগ উঠেছে বারাবার। সমালোচনার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শাসক দলের নেতা হয়েও সৌগত বাবু মনে করছেন, এ রাজ্যে প্রতিবাদে মুখর হচ্ছেন না নাগরিক সমাজ। শুধুই দেশের প্রেক্ষাপটে নয় বাংলার ইস্যু নিয়েও নাগরিক সমাজ যে নীরব, তা মেনে নিচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ। ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল, জেএনইউ-তে মাংস খাওয়া নিয়ে বিতর্ক কিংবা হাইকোর্টে আইনজীবীদের বিক্ষোভ, সব কিছুর বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ করা উচিত বলে মনে করছেন সৌগত রায়। উল্লেখ্য, হাইকোর্টে আইনজীবীদের বিক্ষোভে নিগৃহীত হন বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। কাঠগড়ায় ছিলেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা।
বাঙালি কেন প্রতিবাদ করতে ভুলে যাচ্ছে তার ব্যাখ্যাও এদিন দেন সৌগতবাবু। তাঁর দাবি, “রাজনীতি বাদ দিলেও অন্যায়টা অন্যায় এটা বলার দরকার আছে। না বলাটা বাংলার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। উনবিংশ শতাব্দীতে রামমোহন সতীদাহের বিরুদ্ধে, বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের পক্ষে যে আওয়াজ তুলেছিলেন, সেখান থেকে আজকের বাঙালি কোথায় ভাবতে হবে। নারী নিগ্রহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মহল কোথায় হচ্ছে। আমি মনে করি হওয়া উচিত।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক পুলিশের অনুষ্ঠানে পুলিশের দায়বদ্ধতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সৌগত রায়। সেখানেই তিনি বলেন, “মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটিও ধর্ষণ লজ্জার।” তাঁর এই স্পষ্টভাষায় প্রতিবাদ স্বভাবতই অস্বস্তিতে ফেলে তৃণমূলকে। হাঁসখালি কাণ্ডে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে ‘ছোট ঘটনা’, ‘প্রেগনেন্ট’, ‘লভ অ্যাফেয়ার্স’ শব্দবন্ধ প্রয়োগ করায় তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। তারপরই সৌগত মন্তব্য আরও ঘৃতাহুতি দেয়। TV9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও স্পষ্ট করে দেন, প্রতিবাদ হওয়া উচিত। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকলে নাগরিক সমাজ সেই প্রতিবাদ করবে। তাঁর এই মন্তব্যও নতুন করে তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি করবে বলে ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।