প্রকৃতি জানান দিচ্ছে পুজো এসে গিয়েছে। শরতের মেঘে লেগেছে উৎসবের রঙ। উমা বন্দনায় মেতেছে বাংলা। উৎসবে মেতেছে দেশ। শিউলি ফুলের মাতাল করা গন্ধে সেই কবেই এসে গিয়েছে দেবীর আগমণ বার্তা। ঢাকে পড়েছে কাঠি। মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ঢল। আর এরইমধ্যে টিভি ৯ বাংলা বেরিয়ে পড়েছে ‘অন্য দুর্গার’ খোঁজে। ঘুরছে প্রত্যন্ত এলাকায়, ঘুরছে জেলায় জেলায়। খোঁজ চলছে সেই সমস্ত দুর্গাদের যাঁরা প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছেন সমাজের অসুরদের সঙ্গে। প্রতি বছরের মতো এবার টিভি ৯ বাংলা ভুলে যায়নি সেই সমস্ত অন্য দুর্গাদের যাঁরা সময় সারণী বেয়ে বছর বছর ধরে সমাজের অসুরদের বধ করে চলেছে। এদিন টিভি ৯ বাংলার ক্যামেরা চলে গেল দত্তফুলিয়াতে।
সালটা ১৯৭১, তখন সবে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। সেই সময় এপার বাংলায় ভিড় বাড়ছিল শরণার্থীদের। ছড়িয়ে পড়েছিলেন বাংলার নানা প্রান্তে। টালমাটাল সেই সময় মহিলা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সীমান্তবর্তী গ্রাম বরণবেড়িয়ায় তৈরি হল এক সংস্থা। শ্রীমা মহিলা সমিতি। যাঁদের উদ্দেশ্য মহিলাদের পাশে দাঁড়ানো। গ্রামের মেয়ারাই শুরু করেছিল প্রথমে। তারপর তাঁরা আর চালাতে পারেননি। পরে হাল ধরেন আমাদের অন্য দুর্গা বাণী সরস্বতী। আজ তিলোত্তমার জন্য গোটা দেশ উত্তাল। কিন্তু, আজ থেকে বহু বছর আগে আরও একই মেয়ের সঙ্গে যখন এরকমই এক নির্মম ঘটনা ঘটেছিল তখন তাঁর পাশে ছিল না কেউ। দাঁড়িয়ে ছিলেন শুধু একজন। তিনিই আমাদের অন্য দেবী। সেই গল্প শোনালেন নিজের মুখে।
খানিক স্মৃতির পাতায় হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “সেই সময় গ্রামে মহিলাদের নিরাপত্তার খুবই অভাব ছিল। সেই সময়ই একটি মেয়ে আমাদের মেয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এখানে এসেছিল। আমরা কাজ শিখিয়েছিলাম ওকে। বিয়েও দিই। কিন্তু তারপরেই ঘটে ঘটনা। ওর বরকে বেঁধে রেখে গ্রামের চারটি ছেলে ওকে ধর্ষণ করে। তারপর আদালতে কুড়ি বছর ধরে বিচার চলে। সঠিকভাবে ফায়সালা কিছু হয়নি।”
মা দুর্গা শুধু মাত্র তাঁর চার সন্তানদের নয়, আগলে রাখেন গোটা বিশ্বকে। তাঁর সন্তানেরা যেন ভাল থাকে তা প্রতি মুহূর্তে খেয়াল রাখেন উমা। ঠিক সেভাবেই এই এলাকার সমস্ত নারীদের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন বাণী দেবী। লড়াই করা শেখাচ্ছেন। নির্যাতনের বিরুদ্ধে, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে লড়াই, নিজেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছ্বল করে সমাজে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই শেখাচ্ছেন আমাদের অন্য দুর্গা বাণী সরস্বতী।