কলকাতা: যতজন বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন, তার থেকে কম ভোট পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল বিধানসভায়। আচার্য বিল পেশ হওয়ার জন্য যে ভোটাভুটি হয়েছিল তা নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। পরে স্পিকার নিজে ভুল স্বীকার করলেও বিরোধী দলের তরফে দাবি জানানো হয়েছিল, রাজ্যসভা বা লোকসভার মত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করতে হবে বিধানসভায়। কিন্তু সেই আধুনিক মেশিনেও বাড়ল বিপত্তি। বিরোধী দলনেতা উপস্থিত না থাকলেও, তাঁর নামে পড়ল ভোট। বৃহস্পতিবার অন্য একটি বিলের জন্য ফের ভোটাভুটি হয় বিধানসভায়। বিধানসভায় এ দিন মেশিন ব্যবহার করে ভোট হয়, আর তাতেই ফের বিভ্রান্তি। যদিও পরে বিভ্রান্তি কাটাতে ফের পুরনো পদ্ধতিতে স্লিপের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়।
তৃণমূল জমানায় এ ভাবে ভোট এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভোট হল বিধানসভায়। তাই এ দিন সব কিছু বিধায়কদের বুঝিয়ে দেন পিডব্লুডি-র ইঞ্জিনিয়াররা। বারবার বোঝানোর পর প্রথমে হয় মহড়া,পরে ফাইনাল ভোট হয়। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশ হতেই বোঝা যায় গণ্ডগোল হয়েছে। ফলাফলে দেখা যায়, মোট ১৭৫ জন উপস্থিত রয়েছে। বিলের পক্ষে ভোট পড়েছে ১২০টি, বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৫২টি, ১ জন অনুপস্থিত, ২ জন ভোট দেননি।
এরপরই বিজেপি জানান, তাদের ৫৩ জন থাকার কথা। সে ক্ষেত্রে ফল অনুযায়ী ১ জন কম হচ্ছে। কিন্তু খতিয়ে দেখা যায়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাউজে নেই, কিন্তু তাঁর নামে ভোট পড়েছে। উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও ভোট পড়ে মিহির গোস্বামীর নামেও। স্পিকার বলেন, ‘কেউ ওনাদের বোতামটা পুশ করে দিয়েছেন।’ তারপরই তৃণমূল বেঞ্চ থেকে কটাক্ষ করে বলা হয়, ‘নন্দীগ্রামে কারচুপি’।
পরে ভুল সংশোধন করতে স্লিপে ভোট হয়। তখন দেখা যায়, পক্ষে ভোট পড়েছে ১১৯ টি, বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৫৩ টি, অনুপস্থিত ১ জন। এ ছাড়া ভোট দেননি বিজেপির সত্য নারায়ণ মুখোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের আখরুজ্জামান (রাজ্যের মন্ত্রী)। তখন বিজেপি জানায়, তাঁদের হিসেব মিলেছে। এরপরই পাশ হয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিল।
এ দিন অবশ্য স্পিকার বলেন, ‘আপনারা সবাই চাইছেন ইভিএমে ভোট হোক। আজ একটা ট্রায়াল হল। হয়ত কোনও ভুল কেউ করেছেন।’ কিন্তু বিজেপির অনুপস্থিত বিধায়কদের নামে কেন ভোট পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল বিধায়করা। অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘আগের দিন একজন কর্মচারীর ভুলে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজ ফলস ভোট হল। তদন্তের নির্দেশ দিন।’ স্পিকার উত্তরে বলেন, ‘কোনও উপসংহার টানছি না। তবে স্লিপে আজ ১৭৩ হয়েছে, মেশিন ১৭৫ বলছে। প্রথম দিন হয়ত ভুল হয়েছে।’
উল্লেখ্য, আচার্য বিল নিয়ে যে ভোটাভুটি হয়েছিল, তাতে দেখা যায় ১৮২-৪০ ভোটে বিল পাশ হয়। অর্থাৎ বিরোধীদের ভোট ৪০ টি। তখনই বিজেপি দাবি করতে শুরু করে, হিসেবে গণ্ডগোল হয়েছে। কারচুপি হয়েছে বলে দাবি করেন শুভেন্দু-সহ অনেকেই। পরে সন্ধ্যার পর এই ভোটের পুনর্গণনা করতে গিয়ে দেখা যায়, গণনায় ভুল হয়েছে। তারপর দেখা যায় ১৬৭-৫৫ তে এই বিল পাশ হয়েছে। অর্থাৎ বিরোধীদের ভোট ৫৫টি। পরের দিন অধিবেশনে ভুল স্বীকার করে নেন স্পিকার। বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও দেন তিনি।
এ দিন ছিল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিল। এই বিল অনুসারে, রাজ্যের কৃষি দফতরের অধীনে যতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলি উপাচার্যদের বয়সের মেয়াদ বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৭০ করা হল।