কলকাতা:তাঁর জন্য অন্য রোগীদের যেন অসুবিধা না হয়। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে এই অনুরোধ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। উডল্যান্ডস হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ভিআইপি’ পরিষেবা দিতে গিয়ে অন্য রোগীদের যাতে অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে বুদ্ধবাবু অত্যন্ত সচেতন।
সব পরিকল্পনামাফিক এগোলে মঙ্গলবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হতে পারে। উডল্যান্ডস সূত্রে সেরকমই ইঙ্গিত মিলেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ভেন্টিলেটর থেকে বার করার পরে রবিবার ৪৮ ঘণ্টা পূর্ণ হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী বলেন, ভেন্টিলেটর থেকে বার করার পরে সাধারণত ৭২ ঘণ্টা রোগীকে আইসিইউয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। বাড়িতে ফিরে যাতে শারীরিক জটিলতা না বাড়ে সে দিকেও চিকিৎসকদের খেয়াল রাখতে হচ্ছে।
শনিবারের মতো এদিনও বুদ্ধবাবুর বুকে এবং পায়ের ফিজিওথেরাপি করা হয়। সোমবার তাঁকে হাঁটিয়ে দেখানো হবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে রাইলস টিউবের মাধ্যমে বুদ্ধবাবুকে খাবার দেওয়া হচ্ছিল। এদিন নরম জাতীয় খাবার দেওয়া হয়। কী ধরনের খাবার পছন্দ জানতে চাইলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের কাছে খিচুড়ি এবং পেঁপে খাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। উডল্যান্ডস সূত্রে খবর, ভেন্টিলেশন থেকে বার হওয়ার পরে একজন সিওপিডি রোগীর খাবারে যাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকে সে জন্য ডায়াটেসিয়ানের পরামর্শ মেনে বুদ্ধবাবুর খাবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে বুদ্ধবাবু কী খেতে চান তাও জেনে নিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এরই মধ্যে চিকিৎসকদের কাছে তাঁর বই লেখার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, সহায়কের সাহায্যে তিনি একটি বই লিখছিলেন। চিকিৎসকদের কাছে সেই বইয়ের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারই ইচ্ছাপ্রকাশ করেন তিনি। তাঁর এক চিকিৎসক জানান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিশক্তির সমস্যা রয়েছে। তাই এখনই বই লেখার কাজ এগিয়ে না নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
অন্যদিকে হাসপাতাল সূত্রে খবর, তাঁর এবিজি রিপোর্টও স্বাভাবিক। শারীরিক অবস্থার উন্নতি সন্তোষজনক। সকালে পরীক্ষামূলকভাবে বাইপ্যাপ থেকে নেজল ক্যানুলায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হয়েছিল। নেজল ক্যানুলায় তাঁর দেহে অক্সিজেনের ঘনত্ব ছিল ৯০ শতাংশ। এখনও রাইলস টিউবেই খাবার খাচ্ছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুদ্ধবাবু ভাল আছেন। কথাবার্তা বলছেন। শারীরিক অবস্থার নিরিখে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার বুদ্ধবাবুকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সোমবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ‘বাংলা হিন্দুরাজ্য হবেই, হারের ভয়ে হতাশায় ভুগছেন মমতা’
গত বুধবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ৫১৮ নম্বর কেবিনে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রথমদিকে শারীরিক অবস্থা অনেকটাই ঘোরাল হয়ে উঠেছিল। তবে দিনরাত এক করে চিকিৎসকদের লড়াইয়ে শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন থেকে বের করে তাঁকে নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।
আরও পড়ুন: প্রত্যাহারই করতে হবে কৃষি আইন, ভুখা পেটে আন্দোলনের ডাক অন্নদাতাদের
শনিবারই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, বুদ্ধবাবু এখন পুরোপুরি সঙ্কটমুক্ত। বিকেলে লাল চা, স্যুপ দেওয়া হয় তাঁকে। ফিজিওথেরাপিতেও সাড়া দেন, বিছানার উপর বসে পা নাড়ান তিনি। রবিবার হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রাতে কোনও সমস্যা হয়নি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। ভাল ঘুম হয়েছে। ব্লাড গ্যাস অ্যানালিসিস রিপোর্টও স্বাভাবিক।