Exclusive Sanjoy Roy: সঞ্জয়ের সঙ্গে কী কথা হয় সেঁজুতি-কবিতাদের? কোন সাহসে মাঠে নামলেন তাঁরা?

Jan 24, 2025 | 8:28 PM

Sanjoy Roy: আইনজীবীদেরই একাংশ জানিয়েছেন, সেঁজুতি আরও বেশি উঠেপড়ে লাগেন সঞ্জয়ের পক্ষে প্রমাণ জোগাড় করতে। আগে বহু মামলায় বিচারকের পর্যবেক্ষণ, কেস স্টাডি, রেফারেন্স জোগাড় করতে থাকেন। কেন এই মামলা 'বিরলতম' নয়, সে যুক্তি আরও মজবুত করতে দিনরাত এক করেন।

Exclusive Sanjoy Roy: সঞ্জয়ের সঙ্গে কী কথা হয় সেঁজুতি-কবিতাদের? কোন সাহসে মাঠে নামলেন তাঁরা?
আইনজীবীদের সঙ্গে কী কথা হয় সঞ্জয়ের?
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

শ্রাবন্তী সাহা: স্রোতের বিরুদ্ধে কেবল ‘ওরা’ তিন জন। সারা বাংলা, গোটা-বিশ্ব যখন সরব চরমতম নৃশংস, ন্যক্কারজনক, বিভৎস ঘটনায় দোষীর ফাঁসির দাবিতে, তখন ওঁরা তিন জন ধর্ষক সঞ্জয় রায়ের হয়ে মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কলকাতা পুলিশ থেকে সিবিআইয়ের তদন্তে সঞ্জয়ই একমাত্র অভিযুক্ত। তাকে নির্দোষ প্রমাণ করা আর সাঁতরে প্রশান্ত মহাসগার পার করা একই ব্যাপার। তারপরও ওই তিন জন কেন মামলাটা লড়তে চাইলেন? এমনটা নয়, এই মামলার গভীরতা তাঁরা জানেন না! প্রথম থেকেই যার কম্পনাঙ্ক সিসমোগ্রাফ ছাড়িয়ে একটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে, সেই মামলা হাতে নেওয়া কি চাট্টিখানি কথা!

গত সোমবার সর্বোচ্চ সাজা শোনাতে গিয়ে শিয়ালদহ আদালতের ফার্স্ট জাজ অনির্বাণ দাসের কলম আটকে গিয়েছিল। তাঁর মনে হয়েছে, এই ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়। সঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা দেওয়া উচিত হবে না। আমৃত্যু কারাদণ্ড শুনিয়েছিলেন বিচারক। সিবিআই যেখানে ফাঁসি চাইছে, রাজ্য ফাঁসি চাইছে, তিলোত্তমার মা-বাবা ফাঁসি চাইছেন, আন্দোলনকারীরা ফাঁসি চাইছেন, সেই জায়গায় কোন জাদু বলে বিচারকের কলম ‘থামিয়ে দিতে’ পারলেন ওই তিন আইনজীবী। সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, কবিতা সরকার, সেঁজুতি চক্রবর্তী। কিন্তু কীভাবে? কোন হাতিয়ারে? কেন গোটা সমাজ যখন একদিকে, তখন তাঁরা লড়েছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে?

আরজি করে তিলোত্তমার দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়র সঞ্জয় রায়। তারপর তাকে শিয়ালদহ আদালতে পেশ করা হয়। ঘটনার বিভৎসতায় তখন গোটা বাংলা ‘জ্বলে’ উঠেছে। আর সেই আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে দেশেও। ন্যক্কারজনক এই ঘটনার প্রতিবাদে সঞ্জয়ের হয়ে সেদিন কোনও আইনজীবী লড়তে চাননি। লিগাল এইডের তরফ থেকে সঞ্জয়ের আইনজীবী হিসাবে ঠিক করে দেওয়া হয় কবিতা সরকারকে।

সূত্রের খবর, সঞ্জয়ের কেস হাতে পাওয়ার পর কবিতা তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ঘরে ছিলেন বিচারকও। সেদিন সঞ্জয় তিন জনের সামনেই দাবি করেছিল সে ‘নির্দোষ’। বিচারক সেদিনও তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনি যখন নির্দোষ, এত কিছু বাইরে হয়ে যাচ্ছে, এরপর তো তাহলে বলুন, আসল অপরাধী কে?” সূত্রের খবর, সেদিনও বিচারক, আইনজীবীর সামনে চুপ থেকেছিল সঞ্জয়।

এরপর জেলে সঞ্জয় আর বাইরে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। জল গড়ায় শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। এরই মধ্যে নিজের মক্কেলের সঙ্গে একাধিকবার মুখোমুখি বসেছিলেন আইনজীবী কবিতা। সঞ্জয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কবিতা নিজের ঘনিষ্ঠমহলে বেশ কিছু কথাও বলেছিলেন। সেই সব আইনজীবীদেরই কেউ কেউ জানাচ্ছেন, যতবার সঞ্জয়ের সঙ্গে কবিতা কথা বলেছেন, সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে গিয়েছে। কবিতাও তাঁর ঘনিষ্ঠদের আরও জানিয়েছিলেন, এতবড় অপরাধ করেও সঞ্জয়ের দৈহিক পরিভাষা কখনই একজন দাগী আসামীর মতো লাগেনি। শুধু বলে গিয়েছে, ‘আমি নির্দোষ।’ তাহলে আসল অপরাধী কে? কবিতা ঘনিষ্ঠদের আরও জানান, এ প্রশ্ন তিনি যতবার সঞ্জয়কে জিজ্ঞাসা করেছেন, কোনও এক অদৃশ্য কারণে, সঞ্জয় চুপ হয়ে যায়। আর একটাও কথা বলে না।

এর কিছুদিন পর এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হন আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী। লিগাল এইডের তরফ থেকেই অভিযুক্তের আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর দুই আইনজীবীরই মুখোমুখি বসে সঞ্জয়। একাধিক প্রশ্নের উত্তরে, সে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই জানিয়েছে, সে নির্দোষ। ততদিন সংবাদমাধ্যমের সামনেও মুখ খুলতে শুরু করেছে সঞ্জয়।

আইনজীবীদেরই একাংশ জানিয়েছেন, সেঁজুতি আরও বেশি উঠেপড়ে লাগেন সঞ্জয়ের পক্ষে প্রমাণ জোগাড় করতে। আগে বহু মামলায় বিচারকের পর্যবেক্ষণ, কেস স্টাডি, রেফারেন্স জোগাড় করতে থাকেন। কেন এই মামলা ‘বিরলতম’ নয়, সে যুক্তি আরও মজবুত করতে দিনরাত এক করেন।

মামলার দায়িত্ব নেন ‘চিফ ডিফেন্স কাউন্সেল’ সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ সঞ্জয় আর তার সঙ্গে তিন বর্ষীয়ান আইনজীবী। এরপর শুরু হয়ে যায় কোমর বেঁধে তিন আইনজীবীর লড়াই। সঞ্জয় প্রসঙ্গে সৌরভ বলছেন, ‘‘মামলা লড়ার আগে ওর সঙ্গে অনেক কথা বলেছিলাম। ও কিন্তু গোড়া থেকেই ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছিল।’’ ফাঁসি রুখতে ঘুঁটি সাজাতে থাকেন তাঁরা। আর সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে সিবিআই আদালতে করতে থাকে জোর সওয়াল। সিবিআই-এর আইনজীবীও নিজেদের মতো করে ঘুঁটি সাজাতে থাকে।

এরপর আসে শনিবার, ১৮ জানুয়ারি। বিচারক অনির্বাণ দাস সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেন। ২০ জানুয়ারি, সোমবার ছিল সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণার দিন। সাধারণত রায়দানের দিন নতুন করে সওয়াল জবাবের কোনও অবকাশ থাকে না। বিচারক রায়দানের দিনও সঞ্জয়কে বলার সুযোগ দিয়েছিলেন। বিচারক প্রশ্ন করেছিলেন, “কী হয়েছে আপনার থেকে ভালো আর কেউ জানে না।” বিচারক বলেন, “যা তথ্য এসেছে, সব আপনার বিরুদ্ধেই। এরপর আমরা আর কিছু করতে পারি না।” কাঠগড়ায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে সঞ্জয়। তারপর বলে, “স্যর, আপনি বিচারক। যে দোষটা আমি করিনি তার জন্য আমাকে জোর করে দোষী সাব্যস্ত করা হল।”

কিন্তু হাল ছাড়েননি সঞ্জয়ের আইনজীবীরা। কবিতা সওয়াল করেছিলেন, “বিভিন্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড সমালোচিত হয়েছে। বিকল্প শাস্তি দিন, এটাই আবেদন।” সেঁজুতি এরপর বলতে ওঠেন। একের পর এক যুক্তি খাড়া করতে থাকেন তিনি। সূত্রের খবর, একটা সময়ে এজলাসে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, বিচারক আইনজীবী সেঁজুতির উদ্দেশে বলেন, “আপনার আর কিছু বলার আছে? আমার রায়দানে দেরি হচ্ছে।” তখনও সেঁজুতি বলেছিলেন, “স্যর, রায় দেওয়ার আগে আপনি জানান কেন রিফর্ম করা যাবে না?”

ভারতীয় দণ্ডবিধিতে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড অর্থাৎ ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের সাজা রয়েছে। যদিও বিভিন্ন মহলে তা সমালোচিত। আইনি পরিভাষায়, খুব সহজভাবে বলতে গেলে সাধারণত, অপরাধী এমন কোনও কাজ করে থাকলে, যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, কোনওভাবেই তাকে শোধরানো সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ফাঁসির সাজা হয়। আইনজীবী সেঁজুতি এই সওয়ালই করেছিলেন, কেন এই ঘটনা বিরলতম নয়। ‘কেন এই ‘রিফর্ম’ করা সম্ভব নয়, সেটা আদালতকে বোঝাতে হবে।’

বিচারক এরপর একটু সময় চেয়ে নেন। তারপর ফেরত এসে রায় দেন। আমৃত্যু কারাদণ্ড হয় সঞ্জয়ের। পথে ঘাটে তখন আন্দোলন, কিন্তু নিজেদের ‘সম্পূর্ণ ভিন্ন’ লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন তিন আইনজীবী।

কথা হয়েছিল আইনজীবী সেঁজুতির সঙ্গে। এই ‘অসম’ লড়াইটা লড়তে গিয়ে কী মনে হয়েছে তাঁর? সেঁজুতি জানিয়েছেন, আলাদা করে তাঁর কিছুই মনে হয়নি। আর পাঁচটা সাধারণ মামলার মতোই নিজের মক্কেলের হয়ে সওয়াল করেছেন তিনি। শুধু সাংবিধানিক কয়েকটি যুক্তি খাড়া করেছেন।

আপাতত এই মামলা এখন হাইকোর্টে। কারণ রাজ্য সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। সিবিআইও একই দাবিতে আদালতে। তাই লড়াই এখনও শেষ হয়ে যায়নি ওই তিন আইনজীবীর।

Next Article