কলকাতা: মানুষের মন খারাপ বাড়ছে। মন খারাপ লাফিয়ে বাড়ার সঙ্গে দ্রুত হারে বাড়ছে আত্মহত্যার সংখ্যাও। কারণ হিসেবে উঠে আসছে চাপ, লোভ, ধৈর্যহীনতা। রয়েছে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্যের কারণও। হরিদেবপুর, চুঁচুড়া, জাঙ্গিপাড়া… সব ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে মনবৈকল্য, মনখারাপ, স্ট্রেস কিংবা মূল্যবোধহীনতার মতো বিষয়গুলি। আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বিশ্ব জুড়ে। আত্মহত্যার হার লাফিয়ে বাড়ছে এই দেশে এবং সেই সঙ্গে আমাদের রাজ্যেও।
পরিসংখ্যান বলছে, স্কুল পড়ুয়াদের আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে পড়ুয়াদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ২১ শতাংশ বেড়ে যায়। ৩৫ বছর পর্যন্ত আত্মহত্যা বাড়ছে। ২০২১ সালে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আত্মহত্যার সংখ্যা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। শুধুমাত্র ২০২১ সালেই ১ লক্ষ ৬৪ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। ২০২০ সালের তুলনায় সংখ্যাটা বেড়েছে ৭.২ শতাংশ। আগের বছর আত্মহত্র সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার। আর ২০১৯ সালের এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার। পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট কীভাবে ফি বছর আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে মানুষের মধ্যে।
আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, পারিবারিক সমস্যা বাড়ছে। ভোগবাদী প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে অসহিষ্ঞুতা। এর ফলে ধৈর্য্য কমছে মানুষের মধ্যে। আর এই সবের কারণে মন খারাপ মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। পরিচিত পরিজনকে খুন করতেও হাত কাঁপছে না। ভাবছে না। মূল্যবোধ হারাচ্ছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, একেবারে ছোট থেকে শিক্ষা দিতে হবে। তবেই এই মন খারাপের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব।
বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইন্দ্রনীল সাহা বলেন, “বর্তমানে এই ধরনের মানসিকতা বেড়ে যাওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শুধুমাত্র একটি কারণে এই জিনিসগুলি হয় না। এর মধ্যে আর্থ-সামাজিক, মানুষের বড়ো হওয়া, পরিবেশ… সবকিছুই কারণ হিসেবে রয়েছে। প্রতিটি মানুষের জীবনে করোনা পরবর্তী সময়ে স্ট্রেস বেড়েছে। চাকরি নেই, শিক্ষা নেই, সামনে কোনও ভবিষ্যৎ নেই, অথচ তাঁকে এগিয়ে যেতে হবে। এই স্ট্রেস থেকে কীভাবে মানুষ বেরিয়ে আসবে, তার উপায় মানুষের জানা নেই। ছোটবেলা থেকে এগুলো শিখতে হয়। স্ট্রেস কীভাবে সামলাতে হবে, এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোথাও নেই। সেটি একটি বড় কারণ বলে মনে হয়।”