কলকাতা: একে বর্ষাকাল। তারপর আবার শহরের নানা জায়গায় ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থার কাজ চলছে। এর জের খোঁড়াখুঁড়ি করতে হচ্ছে রাস্তার। ফলে একটু বৃষ্টিতেই জল জমে থাকছে। এই নিয়ে লাগাতার অভিযোগ কলকাতাবাসীর। এই পরিস্থিতিতে কেইআইআইপি’র কাজ নিয়ে রিভিউ বৈঠক করেলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
শহরের সংযুক্ত এলাকার নিকাশি পরিকাঠামো এবং সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বেশ কিছু অংশে রাস্তার যে বেহাল অবস্থা, তা স্বীকার করে নিলেন খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শনিবার কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প ভবনে কেইআইআইপি এবং কলকাতা পৌরনিগম জল সরবরাহ বিভাগ, সড়ক বিভাগ এবং নিকাশি বিভাগের শীর্ষ কর্তা ও আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন ফিরহাদ।
বেহাল অবস্থার জন্য রীতিমতো তিরস্কার করেন কর্তা-আধিকারিকদের। শুধু তাই নয় ব্যাপক ধমক দেওয়া হয় তাঁদের। কাজের গতি কেন শ্লথ এবং পরিকল্পনাহীন ভাবে কাজ করায় কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন এলাকার নিকাশি পরিকাঠামো এবং রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে বলে তিনি সরাসরি দাবি করেন।
শনিবারের বৈঠক থেকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত হয়েছে। শহরের রাস্তা এবং জমা জল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে সাধারণ বাসিন্দাদের। কেইআইআইপি’র অধীনে কলকাতা পুরসভার সংযুক্ত এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের পরিকাঠামো এবং নিকাশির কাঠামো গড়ে তোলার কাজ হচ্ছে। প্রকল্পের ‘ট্রেঞ্চ-২’ তে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেই কাজের গোঁড়া থেকে যে ত্রুটিপূর্ণ কাজ হচ্ছে, তা এদিনের বৈঠক থেকে ছত্রছত্রে প্রমাণ পান মেয়র। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে যে গাফিলতি হয়েছে তাও বুঝতে পারেন তিনি। এরপরই নেওয়া হয় একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ।
১) কেইআইআইপি যে রাস্তাগুলি খোঁড়াখুঁড়ি করে পাইপ বসিয়েছে সেগুলি এবার থেকে কলকাতা পুরসভা মেরামত করবে। কিন্তু সেগুলির অর্থ দেওয়া হবে কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের খাত থেকে।
২) নিকাশি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে কেইআইআইপি’র অধীনে, সেগুলি খতিয়ে দেখে আশ্বস্ত হলে তবেই সার্টিফিকেট দিয়ে কলকাতা পুরসভা নিজেদের হাতে নেবে। তারপরই কন্ট্রাক্টাররা টাকা পাবেন।
৩) পরবর্তী ধাপে যে কাজ হবে,তার মাস্টার প্ল্যান কলকাতা পুরসভা,কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প বিভাগের কর্তারা,নিকাশি বিভাগ,পানীয় জল সরবরাহ বিভাগ,সড়ক বিভাগ বসে তৈরি করবে।
৪) শহরের মোট ৩১টি রাস্তা কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য বেহাল হয়ে রয়েছে। ১৬-১৭টি জায়গার নিকাশি পরিকাঠামো বেহাল। সেগুলি পরিকল্পনাহীন ভাবে কাজ করায় জল নিষ্কাশিত হচ্ছে না।
৫) রাস্তা যেগুলি খারাপ, সেগুলি খুব ছোট ছোট দৈর্ঘ্যের। তাই সেখানে কালো পেভার ব্লক দিয়ে আপাতত মেরামত করা হবে। কারণ সে রাস্তা গুলির তলায় নিকাশি এবং জলের পাইপলাইন বসছে। যাতে কাজ করার সময় নতুন করে রাস্তা খুঁড়তে না হয়,তার জন্য পে ব্লক বসিয়ে মেরামত করা হবে।
৬) দ্বিতীয় দফায় কাজ শেষের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত করা হয়েছিল। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও একই হাল। তাই মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন, কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আধিকারিকরা যেন বৈঠকে বসে এবার শেষ ডেটলাইনটা তৈরি করে দেয়। ‘ট্রেঞ্চ ২’ অর্থাৎ কলকাতা পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় দফার কাজ শেষের পরে তৃতীয় দফার ‘ট্রেঞ্চ ৩’ কাজ শুরু হবে। যেগুলি ১০৮, ১০৯, ১২৭, ১৩০ সহ একাধিক সংযুক্ত এলাকায় কাজ হবে।