কলকাতা: রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। পুজোর আগে রাজ্যের সামগ্রিক ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তায় প্রশাসনও। শুক্রবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কথাতেও শোনা গেল সেই আশঙ্কার সুর। ডেঙ্গির চরিত্র বদল নিয়ে চিন্তায় পুরনিগম। সম্প্রতি এক ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুর রিপোর্টের কথাও এদিন উল্লেখ করেন ফিরহাদ হাকিম। সেই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, শিশুটির শরীরে প্লেটলেট কমছে না। কিন্তু অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। আর এই নিয়েই চিন্তায় পুরনিগম। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরকে এই বিষয়টি জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম।
ফিরহাদ হাকিম জানান, “আমরা অনুভব করতে পারছি যে, একটা কিছু বদল এসেছে। আগে আমরা গাপ্পি মাছ ছাড়তাম, এলাকা পরিষ্কার করতাম… একটা নতুন কোনও স্ট্রেন এসেছে… এটা সিঙ্গাপুরে হয়েছে এর আগে। ডেঙ্গিও মিউটেট করছে। ডেন-৩ তো ডেঙ্গির একটি মিউটেটেড ফর্ম। কিন্তু অন্যান্য উপসর্গ যা ডেঙ্গিতে সাধারণত থাকে না, সেই সব ধরা পড়ছে।” মেয়রের আশঙ্কা, ডেঙ্গি আর কোভিড কোনওভাবে মিশে গিয়ে থাকতে পারে। এই আশঙ্কার বিষয়ে তাঁর অনুমান, ডেঙ্গির চরিত্র বদল করেছে এবং কোভিডের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ করেছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “হঠাৎ করে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে কেন? ডেঙ্গি হলে হঠাৎ অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবে কেন? ডেঙ্গির ক্ষেত্রে তো সাধারণত প্লেটলেট কমে যায়। আবার চিকিৎসা হলে হু হু করে তা বেড়ে যায়। এটাই সাধারণ। কিন্তু একটি শিশুকে ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার পর ভর্তি করানো হয়েছে। তার অন্য কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু হঠাৎ করে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। এই উপসর্গ আগে কোভিডে ছিল। তাহলে কি ডেঙ্গি আর কোভিড মিলিয়ে নতুন কিছু হচ্ছে কি না, তা বিশেষজ্ঞরা বলতে পারবেন। কিন্তু আমরা যাঁরা কাজ করি, তাঁরা এই বিষয়টি বুঝতে পারছি।”
ফিরহাদ হাকিম আরও জানিয়েছেন, “একটি অদ্ভুত রিপোর্ট এসেছে। ৫০ টি নমুনা আমরা নাইসেডে পাঠিয়েছিলাম। তার মধ্যে ৩৫ টি ডেন-৩ এসেছে। যে চিকিৎসা আমাদের কাছে নেই।”
মেয়রের এই আশঙ্কা নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিশিষ্ট চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুইয়ের সঙ্গে। তিনি জানাচ্ছেন, “কোভিড ও ডেঙ্গি উভয়ই ভাইরাস ঘটিত রোগ এবং উভয় ক্ষেত্রেই সাইটোকাইম স্টর্ম হয়। কিন্তু দুটির জীবাণু আলাদা। এই দুটি রোগ একসঙ্গে হওয়ার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু এমন উদাহরণ আমরা খুব বেশি পাইনি। এমন যদি হয়, তাহলে রোগীর শারীরিক অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হতে পারে।”
এমন ক্ষেত্রে কোভিড ও ডেঙ্গির জন্য ওষুধ বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। কারণ, এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসা একটি অন্যটির পরিপন্থী হতে পারে বলে মত তাঁর। তাই যদি দুটি রোগ একসঙ্গে হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় বলে জানান অনির্বাণ বাবু। পাশাপাশি, আশ্বস্ত করে তিনি এও জানান, কোভিড ও ডেঙ্গি একসঙ্গে কতটা হচ্ছে, তার প্রামাণ্য নথি এখনও পর্যন্ত সেভাবে নেই।