কলকাতা: মেলায় ছাড়, বড়দিন, বর্ষবরণ উদযাপনেও লাগাম নেই। সাগরমেলা, বর্ষবরণের উত্সব, জমায়েতে কোভিড বিধি শিকেয়! রাজ্যে বিধি ভাঙায় ফের বিধিনিষেধের বেড়াজাল। তবে এর যৌক্তিকতা নিয়েই শাসক-বিরোধী তরজা। বিরোধীদের বক্তব্য, বিধিনিষেধের বিষয়টি এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে। বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পদক্ষেপ করা উচিত সরকারের। অন্যদিকে, দিলীপের মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সরকার কোনওভাবে বিরোধীদের মতামতকে নিয়ে চলতে পারে না। ফিরহাদের বক্তব্য, অর্থনীতির কথা ভেবেই সরকারকে সমস্ত পদক্ষেপ করতে হয়।
দিলীপ ঘোষের বক্তব্য
অন্যান্য দিনের মতো সোমবার নিউটাউনে প্রাতঃভ্রমণে যান দিলীপ ঘোষ। এদিকে, সোমবার থেকেই রাজ্যে নতুন করে আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধের বেড়াজাল। এই প্রশ্নের মুখোমুখি হলে দিলীপ ঘোষ বলেন, “এটা ঠিক যে ইকোনমিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু ইকোনমিকে বাঁচাতে গেলে ওখান থেকে যে বেশি সংক্রমণ ছড়াবে না তা কে বলতে পারে! এখনও এটা পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। এখনও আরও এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে থাকবে, যে পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে। বড়দিন, নববর্ষকে কেন্দ্র করে যে ধরনের ভিড় হয়েছে সব জায়গায়, এটা একটা ভয়ের কারণ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞরা ভাববেন, যে কী করা উচিত! আর সে জন্য যাঁরা এক্সপার্ট, তাঁদের মতামত নিয়েই ঠিক করা উচিত।”
ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য
চেতলা স্কুলে পড়ুয়াদের ভ্যাক্সিনেশন ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে দিলীপ ঘোষের পাল্টা দেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার বিরোধীদের কথায় চলতে পারে না। রাজ্য সরকারের নিজস্ব দায়িত্ব রয়েছে। মানুষের রুজিরুটিটাও রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। শুধু চমকে আমি কিছু জায়গায় লিখে দিলাম, বক্তব্য রাখলাম, তাতে হয় না। পুরো পরিস্থিতি দেখে নিয়ে, মানুষের যাওয়া আসা, রোজগার সব দেখে আমাদের ইকোনমির দিকটা ভাবতে হয়। অর্থনীতি না দেখলে মানুষ করোনা আক্রান্ত হবেন না, না খেয়েই মরে যাবে। তখন লোকে বলবে, না খেয়ে পশ্চিমবঙ্গে মরে যাচ্ছে। আমাদের ইকোনমিটা দেখতে হবে। ভারতবর্ষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ইকোনমি ভালো। জিডিপি ভালো। সেটা নিয়ে আমি দিলীপদাকে প্রশ্ন করলাম, জবাব দিতে বলুন।”
গণপরিবহনে কোপ
প্রস্তুত, করোনার বাড়বাড়ন্ত পরিস্থিতির মাঝে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই গণপরিবহণের পায়ে পড়েছে বেড়ি। লোকাল ট্রেনে আসনের ৫০%-এর বেশি যাত্রী নয়। শহরতলির লাইফলাইন লোকাল ট্রেন বন্ধ হবে সন্ধে সাতটাতেই। তারপর স্টাফ স্পেশাল চালাবে রেল। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রো। দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে শেষ মেট্রোর সময়সূচি বদল হয়েছে। সাড়ে ৯টার পরিবর্তে শেষ মেট্রো ছাড়বে রাত ৯টায়। মেট্রোয় টোকেন বন্ধ, স্মার্ট কার্ড আবশ্যক।
বিধিনিষেধের কোপে…
পাশাপাশি সোমবার থেকে বন্ধ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। পরীক্ষা কি আদৌ হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড বা উচ্চ শিক্ষা দফতর। বন্ধ থাকবে সুইমিং পুল, স্পা, জিম, বিউটি পার্লার, সেলুন, চিড়িয়াখানা-সহ সব পর্যটন কেন্দ্র ও বিনোদন পার্ক। শুরু হচ্ছে নাইল কার্ফু। সোমবার রাত থেকেই শহরের ৩১ জায়গায় নাকা চেকিং। রাত ৯ টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলবে চেকিং। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই নাকা চেকিং চলবে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: দূরত্ববিধি শিকেয়, লোকাল ট্রেনে বাদুরঝোলা ভিড়! কোথায় সরকারি নির্দেশ?