কলকাতা: গার্ডেনরিচের বিপর্যয়ের পর প্রথমবার বিল্ডিং বিভাগের সব আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসলেন মেয়র ফিররহাদ হাকিম। কলকাতা পুরনিগমের অধিবেশন কক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন তিনি। সেই বৈঠকে রীতিমতো বিস্ফোরক মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে মেয়রকে। কারও কাছে মাথা নত করবেন না, পুর আধিকারিকদের এদিন সরাসরি এই নির্দেশ তিনি দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তিনি বলেছেন, “অনেক হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক নেতা হোক বা প্রভাবশালী ব্যক্তি হোক, কারও কাছে মাথা নত করবেন না।”
অফিসারদের সতর্ক করে মেয়র বলেন, “আমরা যারা নির্বাচিত হই, তারা তো পাঁচ বছরের জন্য। আজ আছি, কাল চলে যাব। কিন্তু আপনাদের ফুল টার্মের (পূর্ণ মেয়াদ) জন্য থাকতে হবে। আমি নিজে বললেও কোনও বেআইনি নির্মাণে অনুমোদন দেবেন না। কোনও কেউকেটার কাছে মাথা নত করবেন না।” কোনও নির্মাণ বেআইনিভাবে হয়ে থাকলে, সেগুলি দ্রুত ভেঙে ফেলার নির্দেশও দিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। বলেছেন, “কোনও নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হবে না।”
বরো স্তরের বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তাঁরা রাস্তায় বেরিয়ে কোথায় কোথায় বেআইনি নির্মাণ হয়েছে, সেই তালিকা তৈরি করেন। এরপর সেগুলিকে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে দিতে হবে। সূত্রের খবর, ফিরহাদ এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওই তালিকা পাওয়ার পর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কলকাতা পুরনিগমের কমিশনারের সঙ্গে কথা বলবেন, তারপর পুরনিগমের কমিশনার কলকাতা পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে কথা বলবেন ও নির্মাণ ভাঙার ব্যবস্থা করা হবে।
বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আর কোনও টালবাহানা চলবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ফিরহাদ। জানা যাচ্ছে, বৈঠকে ফিরহাদ বলেছেন, “আমি মেনে নেব না। এটা আমি কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলাম। একটা বিষয় আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই, আইন সবাইকে মানতে হবে। বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত আইন কড়াভাবে লাগু করতে হবে।”
গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার ১৫ নম্বর বরোর প্রায় সব ইঞ্জিনিয়ারদের বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এদিন বিল্ডিং বিভাগের শোকজ হওয়া আধিকারিকদের মধ্যে এক আধিকারিককে বৈঠকের মাঝেই থেকেই উঠে দাঁড়াতে বলেন মেয়র। রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়র তাঁকে বলেন, “আপনার ত্রুটি এবং গাফিলতির জন্য এতজন লোক মারা গেল। হয় আপনি অপদার্থ নয়ত, আপনি চোর। আপনার গাফিলতির জন্য যে ঘটনা ঘটে গেল, তাতে আমাকে লোকে চোর বলছে। এটা আমি শুনতে চাই না। আপনি উল্টোদিকের বাড়িতে নোটিস লাগালেন, কিন্তু যে বাড়ি, যেটা বেআইনি, সেটাতেই নোটিস দিলেন না? নোটিস দিলেন না বলেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল।”