কলকাতা: আবারও বেফাঁস মন্তব্য করলেন মানিকতলার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে (Sadhan Pandey)। কিন্তু এবার আর অতীতের মতো ‘স্পিকটি নট’ থাকলেন না রাজ্যের অপর মন্ত্রী তথা শাসকদলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। দিলেন সুস্পষ্ট বক্তব্যও।
শুক্রবার রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল। সেই উপলক্ষে শাসকদলের তরফে প্রতিটি কোণে কোণে নানা অনুষ্ঠান করা হয়। এদিনও নিজের বিধানসভা এলাকায় প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের ফাঁকে সাধনবাবু বলেন, “যারা খারাপ, তাঁদের দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত। নইলে দলেরই খারাপ হয়।”
ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী এই বক্তব্যের পরই দলের অন্দরে গুঞ্জন তৈরি হয়। দলের কোন নেতাদের উদ্দেশে তিনি একথা বললেন, তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় চুলচেরা বিশ্লেষণ। এদিকে নিজের এলাকায় দলের একই কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন পুর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সাধনদা অনেক সময় অনেক কিছুই বলছেন প্রকাশ্যে। তবে আমি মনে করি, যদি কিছু বলারই থাকে, দলের মধ্যে বলাই উচিত। বাইরে বলে ওস্তাদ হওয়ার দরকার নেই।”
স্বাভাবিকভাবেই ফিরহাদ হাকিমের এই বক্তব্য বর্তমানে তৃণমূলের অন্দরে যথেষ্টই ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, বর্তমানে শাসকদলে সব স্তরের কর্মী-নেতাদের একাংশ দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। পিছপা হচ্ছেন না বিধায়করাও। এদিন স্পষ্ট ভাষায় মন্ত্রীকে ‘ওস্তাদ’ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সেই সব ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা-কর্মীদের বার্তা দিলেন ফিরহাদ। আর তা যে খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোরই বকলমে বার্তা, সেই বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মাঝে মধ্যেই দল সম্পর্কে সাধনবাবুর বিতর্কিত মন্তব্য তৃণমূলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি ঘিরে তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে মানিকতলা বিধানসভার বেশ কিছু বিদায়ী কাউন্সিলরের অনুগামীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মাত্রাছাড়া আকার নিয়ে নিয়েছিল। গত বছরে লকডাউনেও মানিকতলায় বিভিন্ন জায়গায় শাসকদলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে। দলের বিধায়ক পরেশ পাল এবং রাজ্যের মন্ত্রী তথা পার্শ্ববর্তী এলাকার বিধায়ক শশী পাঁজার সঙ্গে সাধনবাবুর দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। বিষয়গুলি শাসকদলের নেতৃত্বের নজরে এলেও তেমন কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
সাধন শিবিরের পাল্টা গোষ্ঠীর দাবি, নেতৃত্বের নিষ্ক্রিয়তাই মানিকতলার এই প্রবীণ বিধায়কের বাড়বাড়ন্তের পিছনে অন্যতম কারণ। কিন্তু বর্তমানে শাসকদলের অভ্যন্তরে যে টালমাটাল অবস্থা, তাতে সাধনবাবুর বক্তব্য যে মাত্রাতিরিক্ত বিতর্ক তৈরি করেছে, তা মেনে নিয়েছেন শাসকদলের শীর্ষ নেতারাও। তাই এদিন আর চুপ থাকেননি তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক।
ফিরহাদ হাকিম ঘনিষ্ঠ মানিকতলার এক নেতার কথায়, অভিযোগের বহর বেড়েই চলেছিল আমাদের পুর দলের নেতার কাছে। তাই এবার রীতিমতো বাধ্য হয়েই ‘ওস্তাদ’ কথাটি উল্লেখ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। এদিন ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যেভাবে দলের কথা প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, তাতে আদতে দলকে ছোট করা হচ্ছে। তা তিনি কোনওভাবেই মেনে নেবেন না।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালকে ‘ঘুমের ওষুধ’ খাওয়ানোর নিদান পার্থর
সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে অনেকেই গিয়েছেন। দল ছাড়ার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন আবার অনেকেই। সেখানে সাধন পাণ্ডের নাম যে একেবারে শোনা যাচ্ছে না, তা অস্বীকার করছেন না তৃণমূলের নেতারা। এই বিষয়ে সাধনবাবু কিছু না বললেও ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিজেপি তিনরকম ভাবে দল ভাঙানোর চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে, বিভিন্ন পদে লোভের ফাঁদে ফেলে এবং রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে। কিন্তু আমরা তাতে ভয় পাই না।”
দলের তথাকথিত বিক্ষুব্ধদের নিয়ে ফিরহাদ হাকিম এদিন আরও বার্তা দিয়ে বলেন, “যা বলার দলের মধ্যেই বলা উচিত। কারও যদি কিছু বলার থাকে, তা হলে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলবেন! সংবাদমাধ্যমে বলে তো কেউ খারাপ-ভাল হয় না। আর কে খারাপ, কে ভাল, সেটার বিচার কে করবে! করবেন দলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আছেন। তিনিই বিচার করবেন।” এবার এই পরিস্থিতিতে দেখার দলের এই শীর্ষনেতার বার্তা বিক্ষুব্ধরা আদৌ শুনবেন, নাকি ধর্তব্যের মধ্যে আনবেন না, সেটাই এখন মূলত দেখার বিষয়।