কলকাতা: মাছে-ভাতে বাঙালির রসনাতৃপ্তির দিকে বরাবরই আলাদা রকমের টান। বঙ্গ রাজনীতির আঙিনাতেও তাই এই রসনাতৃপ্তির বিষয়টি বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। যখনই কোনও কঠিন সময় উপস্থিত হয়েছে, সামনে এসে কখনও হাজির হয়েছে ফিশ ফ্রাই, কখনও আবার লুচি- আলুর দম, তো আবার কখনও ঝালমুড়ি। এই তো গতসপ্তাহেই কুণাল ঘোষ বেজায় বিরক্তি প্রকাশ করলেন উত্তর কলকাতার দলীয় সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। একেবারে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তারপর আজ বিকেলে শো কজ় নোটিস আর তারপর সন্ধেতেই একেবারে সুদীপের বাড়িতে গিয়ে হাজির কুণাল। নাড়ু-ফিশফ্রাই সহযোগে চলল দীর্ঘ বৈঠক। সেখানে নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। আর বৈঠক শেষে সুদীপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে একেবারে সুর নরম কুণালের। গত সপ্তাহে যে ঝাঁঝালো নরমে-গরমে আক্রমণ দেখা গিয়েছিল, তা যেন বেমালুম গায়েব। এটাই কি ফিশ ফ্রাইয়ের মহিমা?
বঙ্গ রাজনীতির সঙ্গে ফিশ ফ্রাই জুড়ে গেছে, সে অনেকদিন হল। ২০১৪ সালের কথা। তখন মোদী ম্যাজিকের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। ওই সময়ে বামেদের কেউ কেউ বিজেপিতে ভিড়তে শুরু করেছিলেন। আর সেটা থেকে সিঁদুরে মেঘ দেখছিল তৃণমূল। বিভিন্ন অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া নিয়ে নবান্নে গিয়েছিলেন বিমান বসু, রবিন দেবরা। শোনা যায়, সেখানে বিমানবাবুদের চা-কফি, ফিশ ফ্রাই খাইয়ে মমতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, কেন বামেদের থেকে লোকে বিজেপিতে চলে যাচ্ছে?
শুধু কি ফিশফ্রাই? লুচি-আলুরদমই বা বাদ যায় কেন? এরও এক কাহিনি রয়েছে। ২০১৯ সালের কথা। সব্যসাচী দত্ত তখন বিধাননগরের মেয়র। তৃণমূলের বিধায়ক। আর তৃণমূলের একদা চাণক্য বলে পরিচিত মুকুল রায় তখন বিজেপিতে। সেই মুকুল রায় একদিন সন্ধেয় আচমকা হাজির হয়েছিলেন সব্যসাচীর বাড়িতে। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান। লুচি-আলুরদম খান। তবে রাজনীতির কোনও বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলেই জানিয়েছিলেন মুকুল। তাৎপর্যপূর্ণ, ২০১৯ সালেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সব্যসাচী। পরে অবশ্য আবার ফিরে আসেন তৃণমূলে।
অতীতে একবার ভিক্টোরিয়ার সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি খেয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তখনও বাবুল তৃণমূলে আসেননি। তখন তিনি বিজেপির লোক। পরে যখন বাবুল তৃণমূলে যোগ দিলেন, তখন বিরোধী শিবির আবার খুঁচিয়ে তোলে সেই ঝালমুড়ির প্রসঙ্গ। ঝালমুড়ি খাওয়ার সময়েই তৃণমূলের সঙ্গে বাবুলের গোপন ডিল হয়েছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও বাবুলের যুক্তি ছিল, তখন তিনি সদ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। নজরুল মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে গাড়ি দূরে রাখতে হয়েছিল। বাবুলের দাবি, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীই বলেছিলেন,তাঁর গাড়িতে বসার জন্য। বাবুলও তখন যেহেতু সবে মন্ত্রী হয়েছেন, তাই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনেকগুলি বিষয়ে আলোচনাও করার ছিল। তাই উঠে পড়েছিলেন এবং যাওয়ার পথে ভিক্টোরিয়ার সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ঝালমুড়ি খেয়েছিলেন।