কলকাতা: কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি (CFSL)-এর রিপোর্ট আসতেই তিলোত্তমার ঘটনায় খুলে যাচ্ছে একের পর এক নয়া মোড়। প্রশ্ন উঠছে এই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত কি কন্ডোম পরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে? ৯ অগস্টের ঘটনায় পাঁচদিন পর ১৪ অগস্ট তদন্তে নামে সিবিআই। এই পাঁচদিনে তথ্যপ্রমাণ সংক্রান্ত নমুনা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ কেন সুনিশ্চিত করা সম্ভব হল না। চিকিৎসকদের আরও প্রশ্ন, গোপনাঙ্গে সিমেন মেলেনি। তাহলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখিত যোনিদ্বারে সাদা পুরু চটচটে তরল এল কী ভাবে? এই সাদা পুরু চটচটে তরলের কেমিক্যাল অ্যানালিসিস কী করা হয়েছে? একজনের পক্ষে কি এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব?
তিলোত্তমাকাণ্ডে দিল্লি এইমসের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক আদর্শ কুমারের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বোর্ডের ১১ জন সদস্যের মধ্যে তিনজন ফরেন্সিক মেডিসিনের এবং সার্জারি, স্ত্রীরোগ, অর্থোপেডিক, অপথ্যালমোলজির দু’জন করে চিকিৎসককে রাখা হয়।ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তিলোত্তমার দেহের সব ধরনের আঘাত নিরীক্ষণ করে এ রাজ্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য ছিল, এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িয়ে থাকতে পারে।
সিবিআইয়ের প্রশ্নে বিশেষজ্ঞ বোর্ড জানিয়েছে, তিলোত্তমার মুখমণ্ডল, ঘাড়,গোপনাঙ্গের আঘাত-সম্পর্কিত প্রমাণে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ বিষয়ে সুনিশ্চিত হতে আরও ডিএনএ অ্যানালিসিসিসের পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞ বোর্ড। সিবিআইয়ের প্রশ্নের ধরনে গলদ রয়েছে বলে দাবি ফরেন্সিক মেডিসিন, ডিএনএ বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন না তা কোথাও স্পষ্ট করেনি বিশেষজ্ঞ বোর্ড। উল্টে সিবিআইয়ের প্রশ্নে একাধিক ব্যক্তির যুক্ত থাকার সম্ভাবনাও জোরাল হয়, দাবি বিশেষজ্ঞদের। চিকিৎসকদের প্রশ্ন, এমআইএমবি’র কাছে সিবিআই জানতে চেয়েছিল, তিলোত্তমার দেহের আঘাত অপরাধের সময় অপরাধীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির কারণে কি না?
এমআইএমবি জানিয়েছে, তিলোত্তমার সঙ্গে অপরাধীর ধস্তাধস্তির কারণেই এই আঘাত!প্রশ্ন, সিএফএসএলের রিপোর্টে তাহলে ম্যাট্রেস বা তথাকথিত অপরাধ স্থলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন মিলল না কেন? VAGINAL SWAB’এ সিমেনের উপস্থিতি নেই। অথচ পিএমআর রিপোর্টে FORCEFUL INSERTION/PENETRATION এর কথা বলা হয়েছে। এটা কী ভাবে সম্ভব? এমআইএমবি’র কাছে এই প্রশ্নও রেখেছিল সিবিআই
জবাবে এমআইএমবি জানিয়েছে, যৌনাঙ্গ ছাড়াও একাধিক ভাবে পেনিট্রেশন হতে পারে। যেমন ‘NON-PENILE PENETRATION, PENILE PENETRATION WITHOUT EJACULATION, PENILE PENETRATION WITH USE OF BARRIERS LIKE CONDOMS’
কারণ CFSl-এর রিপোর্ট অনুযায়ী তিলোত্তমার যোনিতে মেলেনি সিমেনের উপস্থিতি। সেই কারণে সিবিআইও- কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক দলের কাছে জানতে চেয়েছে, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তাহলে নির্যাতিতার ভ্যাজাইনাল সোয়াবে কেন সিমেন মিলল না ? এ প্রসঙ্গে, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্ত বলেন, “এই রিপোর্টে বলা হয়েছে কন্ডোম ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। যদি আমি বলি কন্ডোম পরে এই নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে কন্ডোম কোথায় গেল? সেটা নিশ্চয় ঘটনার অকুস্থলে থাকবে। নয়ত টয়লেট দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আর যদি কেউ কন্ডোম পরে এই কাজ করে তাহলে সেখানে সিমেন থাকবে।”