কলকাতা: বিগতে কয়েকদিনে শ্বাসকষ্টের সমস্যাটা অনেকটাই বাড়ে। বাড়ি থেকেই চলছিল চিকিৎসা। কিন্তু, শনিবার সকালের পর থেকেই ক্রমেই অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাতেই আর ঝুঁকি নিতে চাননি চিকিৎসকেরা। তড়িঘড়ি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে (Former chief minister of the state Buddhadev Bhattacharya) আনা হয় উডল্যান্ডস হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই ভর্তি রয়েছেন তিনি। চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী, সৌতিক পাণ্ডার নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে নয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। কিন্তু, এখন কেমন আছেন তিনি? চিকিৎসায় সাড়ে দিলেও এখনও বেশ সঙ্কটজনক অবস্থাতেই রয়েছেন বুদ্ধদেব। জানাচ্ছেন চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তী। তাঁর শরীরে পাওয়া গিয়েছে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স এক ব্যাক্টেরিয়ার খোঁজ। ক্লেবশিয়েলা (Klebsiella) নামে এই মারণ ব্যাক্টেরিয়ার খোঁজ পেয়েছেন চিকিৎসকেরা। ফুসফুসের দু’দিকেই আক্রমণ করেছে নিউমোনিয়া। সে কারণেই বদলে ফেলা হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক। এখন আগামী ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কৌশিকবাবু বলছেন, “কার্বন-ডাই-অক্সাইডের লেভেল বেড়ে যাওয়ার কারণেই আমরা ওনাকে ভেন্টিলেশনে রাখতে বাধ্য হয়েছি। ওনাকে অনেক কষ্ট করে শ্বাস নিতে হচ্ছিল, প্রেসারেরও অদ্ভুত ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। সে কারণেই আমরা ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন ওনাকে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে তাতে কাজ হবে বলে আমরা আশা করছি। তবে কতটা শারীরিক উন্নতি হবে সেটা আগামী কয়েকদিনে বোঝা যাবে। ওনার শরীর অ্যান্টিবায়োটিক কতটা গ্রহণ করতে পারছে, কতটা কাজে লাগছে, নিউমোনিয়া কমছে কিনা সেটা এখনই বোঝা সম্ভব নয়।”
এর আগেও একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। হয়েছেন কোভিডের শিকার। ভর্তি থেকেছেন আইসিইউতে। কিন্তু, সেই সময়ের সঙ্গে এখন বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থার কতটা পরিবর্তন দেখছেন চিকিৎসকেরা? এ প্রসঙ্গে কৌশিকবাবু বলছেন, “বছর দুয়েক আগে কোভিড সংক্রমণের পূর্বে উনি এসেছিলেন হাসপাতালে। সেই সময় সিওপিডি-র জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে যাওয়ায় ওনাকে ভর্তি হতে হয়েছিল। তখন উনি এসেছিলেন প্রায় অজ্ঞান অবস্থায়। তা দেখেই আমরা ওনাকে ভেন্টিলেট করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে দেড় থেকে দুদিনের মধ্যে ভেন্টিলেশন সাপোর্টের বাইরে ওনাকে আনা যায়। কিন্তু, সেবার শুধুই কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়েছিল, অক্সিজেন ঘাটতি হচ্ছিল। এবার কিন্তু, ফুসফুসের নিউমোনিয়াটা খুবই মারাত্মক। সেটাই আমাদের ভাবাচ্ছে। আর বয়সের কারণে ওনার ফুসফুসের ক্ষমতাও তো অনেকটা কমে গিয়েছে।”
যদিও হাসপাতাল সূত্রে খবর, রাতে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার পর অনেকটাই ভাল আছেন বুদ্ধবাবু। এখন তাঁর শরীরে সিআরপি ৩১৮। যা স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি। ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে দেওয়ার পর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ১০০ শতাংশ। তবে এখনও আচ্ছন্ন অবস্থাতেই রয়েছেন তিনি। এদিকে তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, বুধবার থেকে জ্বর আসে বুদ্ধবাবুর। শুক্রবার থেকে শুরু হয় মারাত্মক শ্বাসকষ্ট। শনিবার আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তিনি। বাড়িতেই হয় রক্তপরীক্ষা। কিন্তু, তারপরেও কিছুতেই নাকি তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি।