কলকাতা: পুরভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও ভাবেই জোট নয়। আইএসএফের সঙ্গেও নির্বাচনী বোঝাপড়ায় যেতে নারাজ ফরওয়ার্ড ব্লক। সোমবার পুরভোট নিয়ে বামফ্রন্টের যে বৈঠক ছিল, সেখানে এমনটাই স্পষ্ট করে দিয়েছে ফব নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, ফরওয়ার্ড ব্লক ইতিমধ্যেই শুনিয়ে রেখেছে, জোট হলে ফ্রন্টে থাকবে না তারা। ফব’র রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন আর অন্য কারও হাত ধরে ভোটের ময়দানে নামতে চায় না বামফ্রন্টের এই শরিক দল।
পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়ে এদিন বৈঠক করে বামফ্রন্টের সমস্ত শরিক দল। সেখানে মূলত আগামী পুরভোটের প্রস্তুতি নিয়েই আলোচনা হয়। সেখানে ফব তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। যদিও এই প্রথম নয়। কংগ্রেস, আইএসএফকে নিয়ে চলতে তারা যে মোটেই খুশি নয়, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে একাধিক বার সে কথা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।
নরেন চট্টোপাধ্যায়দের সাফ কথা, বামফ্রন্টে থেকেই তাঁরা লড়াই করতে চান। কিন্তু সেখানে অন্য কোনও দলের প্রবেশ তাঁরা মানতে নারাজ। প্রয়োজন পড়লে তাঁরা একলা লড়াই করবেন, এই হুঁশিয়ারিও তাঁরা দিয়েছেন।
তবে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাথমিক বক্তব্য হল আইএসএফ বা কংগ্রেস নয়। অতীতে বামফ্রন্ট যেমন ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়ে এসেছে, লড়াই হোক সেভাবেই। তাৎপর্যপূর্ণ এদিনের বৈঠকে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে বলেই সূত্রের দাবি।
যেখানে বামপন্থীরা প্রার্থী দিতে পারবে না, সেখানে যদি কোনও বাম মনোভাবাপন্ন বা প্রগতিশীল কেউ থাকেন তাঁকে ফ্রন্ট প্রার্থী করলে ফব তাতে সমর্থন জানাবে। যেহেতু কলকাতার পুর ভোট। তাই সর্বতোভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আলোচনায়। এখানেও প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বামেরা ধরেই নিচ্ছে, সর্বত্র তারা প্রার্থী দিতে পারবে না?
প্রসঙ্গত রবিবারই ছিল সংযুক্ত মোর্চার অন্যতম শরিক আইএসএফের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেখানেও আব্বাস সিদ্দিকির দল সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা ও হাওড়া পুরভোটে একাই লড়বে তারা। কোনও জোটের প্রার্থী হয়ে তারা থাকবে না। সূত্রের দাবি, এই বৈঠকে এও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার বাছাই করা আসনে লড়বে আইএসএফ। তবে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেউ যদি আইএসএফের দিকে হাত বাড়ায়, তাহলে তারাও মৈত্রীর হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত।
কুশের ভোটের আগে সেই জোট হল সংযুক্ত মোর্চা। সেখানে যোগ দিল আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। ভোটের আগে জোর প্রচার, ভোটেও চলল লড়াই। কিন্তু এত কিছুর পরও ২ মে থেকে এ রাজ্যের পরিষদীয় রাজনীতি থেকে সিপিএম, কংগ্রেসের অস্তিত্বটাই বিলুপ্ত হয়ে গেল। বরং উল্লেখযোগ্য ভাবে আইএসএফ একটি আসন জিতে বিধানসভায় প্রবেশের অধিকার আদায় করে নেয়।
এই সংযুক্ত মোর্চা নিয়ে একুশের ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই নানা সমালোচনা-বিতর্ক শুরু হয়। বিশেষ করে বামফ্রন্টের শরিকি দলগুলি আইএসএফকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে লড়ার বিষয়টিকে মোটেই ভাল ভাবে নেয়নি। বরং তাদের বক্তব্য ছিল, সাধারাণ মানুষের কাছে এই জোট বিরূপ বার্তা দিয়েছে। কারও কারও মনে হয়েছে, সিপিএমের এই সিদ্ধান্তে কোথাও গিয়ে ধর্মীয় উদারতার যে বার্তা তা ক্ষুন্নই হয়েছে।
তাই এবার আর ভোটের জটিলতা চাইছে না বামফ্রন্টের শরিকদল ফব। বাকিরা কী ভাবছে তা যদিও এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ফব’র এদিনের বক্তব্যের নিরিখে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “যে কোনও দলেরই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। সে কারণেই তো আলাদা রাজনৈতিক দল। ফরওয়ার্ড ব্লকেরও আছে। তারা কী করবে কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমাদের মত দেওয়া তাতে ঠিক নয়। তবে বামফ্রন্টের একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। বামফ্রন্ট আকাশ থেকে পড়েনি। দীর্ঘ লড়াইয়ের সেই বাস্তবকে খেয়ালে রেখেই আমরা চলার পক্ষপাতি।”