কলকাতা: আবারও চার বিধায়কের শপথগ্রহণ (Oath Taking Ceremony) ঘিরে তৈরি হল জটিলতা। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় শপথবাক্য পাঠ করবেন গোসাবা, খড়দহ, দিনহাটা ও শান্তিপুরের বিধায়করা। কিন্তু সেই শপথ ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে পড়ানোর ভার দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এখানেই উঠেছে প্রশ্ন, স্পিকার থাকতে কেন ডেপুটি স্পিকারকে এই ভার দেওয়া হল। এই নিয়ে রাজভবন ও বিধানসভার পরিষদীয় দফতরের মধ্যে চিঠিচাপাটিও চলেছে বলেই সূত্রের খবর।
সংবিধানে রয়েছে, মন্ত্রী, বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন রাজ্যপাল। সঙ্গে এ কথাও বলা আছে, রাজ্যপাল চাইলে বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর ক্ষমতা অন্য কারও হাতে (বিধানসভার অধ্যক্ষের হাতেই মূলত যা দেওয়া হয়) তিনি তুলে দিতে পারেন। মনে করা হয়েছিল, মঙ্গলবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চার বিধায়কের শপথ পাঠের ভার দেওয়া হবে।
কিন্তু বিকেলে পরিষদীয় দফতর ও রাজভবনের ফাইল চালাচালির পর রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় জানান, এবার ডেপুটি স্পিকার শপথবাক্য পড়াবেন। এ বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যপাল শপথ পাঠ করাবেন না। কী ভাবে হবে, কোথায় হবে তা আমরা নিজেরা ঠিক করে নেব।” অন্যদিকে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না।
কিছুদিন আগেও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হতে শোনা গিয়েছিল অধ্যক্ষকে। মনে করা হচ্ছে, সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন রাজ্যপাল। শাসকদলের তরফে বক্তব্য, অধ্যক্ষ রয়েছেন, অথচ উপাধ্যক্ষ শপথ পড়াচ্ছেন এটা একেবারে দৃষ্টিনন্দন নয়।
এরপর সন্ধ্যার মুখে আরও একটি চিঠি পরিষদীয় দফতর থেকে রাজভবনে যায়। সেখানে বলা হয়, যেখানে স্পিকার আছেন, সেখানে ডেপুটি স্পিকারকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর দায়িত্ব দেওয়া কিছুটা দৃষ্টিকটু। তাই এই বিষয়টি রাজ্যপাল যেন পুনরায় বিবেচনা করে দেখেন।
সপ্তদশ বিধানসভার ক্যাবিনেট সদস্যরা যেদিন শপথ নেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ই সেই শপথবাক্য পাঠ করান। বাকি বিধায়কদের ক্ষেত্রে বিধানসভায় যেদিন শপথবাক্য পাঠ করানো হয় প্রোটেম স্পিকার প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুধু শপথবাক্য পড়িয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়।
এরপরই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে রাজ্যপাল বাকি বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর অধিকার ন্যস্ত করেন। সেই মতো বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শপথবাক্যও পড়ান। এত অবধি সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু ভবানীপুরের উপনির্বাচনে জয়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুদিন আগে রাজভবন থেকে বিধানসভার সচিবালয়ে একটি চিঠি আসে। যেখানে বলা হয়, অধ্যক্ষকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর যে অধিকার রাজ্যপাল দিয়েছিলেন, তা তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। অর্থাৎ অধ্যক্ষ নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শপথ নেওয়াবেন রাজ্যপালই।
এই শপথপর্ব নিয়ে প্রচুর জলঘোলা হয়। অবশেষে রাজ্যপালই বিধানসভা ভবনে গিয়ে শপথ পাঠ করান। আবারও নতুন করে শপথ নিয়ে তৈরি হল জটিলতা।