কলকাতা: জামতাড়া গ্যাংয়ের পর কি মুঙ্গের গ্যাং? আধার নির্ভর লেনদেন প্রথাকে কাজে লাগিয়ে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে টাকা। বহরমপুরের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা হাপিস হয়ে যায়। পরে যদিও তিনি সেই টাকা ফেরতও পেয়ে যান। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই, আধার-প্যান লিঙ্ক নিয়ে যখন হইচই চলছে। তখন এভাবে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি! আদৌ কি সরকার সেই সুরক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছে?
কী ঘটেছিল?
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কল্যাণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দশ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এরপর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। সেই মেসেজের তলায় টাকার প্রাপকের নামের জায়গায় লেখা ছিল ‘কুণালকুমার-মুঙ্গের’! আর এখানেই ‘আধার এনেবলড পেমেন্ট সিস্টেম’ কারচুপির সঙ্গে নাম জড়িয়ে গিয়েছে মুঙ্গেরের। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অবশ্য তাঁর টাকা ফেরত পেয়েছেন।
কী ভাবে ফেরত পেলেন টাকা?
জানা গিয়েছে, প্রথম দিন ১০ হাজার টাকা উধাও হওয়ার পরই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেন কল্যাণবাবু। পরদিন ফের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার চেষ্টা হলে প্রতারকের কার্যসিদ্ধি হয়নি। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পাশাপাশি টাকা গায়েবের বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাতেই টাকা ফেরত পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
শিক্ষকের মতে আধার পোর্টালে বায়োমেট্রিক লক আনলক থাকার কারণেই বিপত্তি। সেটি যে আনলক হয়ে রয়েছে এবং তার জেরে প্রতারকেরা এই কাণ্ড ঘটাতে পারে তা প্রবীণ নাগরিকদের অজানা ছিল। তারই সুযোগ নিয়ে পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যায় টাকা।
তথ্য আরও রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জানাচ্ছেন, এ ভাবে ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার টাকা তোলা যায়। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়ায় যা আর সম্ভব হয়নি। তবে তাঁরই এক প্রতিবেশীর ছ’দফায় ১০ হাজার টাকা করে ৬০ হাজার টাকা খোওয়া গিয়েছে। ওই প্রতিবেশী মেসেজ দেখেননি। যখন দেখেন ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। কল্যাণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “”আমাকে ব্যাঙ্ক থেকে জানানো হয় অ্যাকাউন্ট দ্রুত ফ্রিজ করতে। আমি ফ্রিজ করি অ্যাকাউন্ট। এর কয়েকদিন পর মেসেজ আসে যে কেউ বা কারা টাকা তোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু সে টাকা তুলতে পারেনি।”
কীভাবে আটকান যেতে পারে প্রতারণা?
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “দলিল থেকে এই ফ্রডগুলো হচ্ছে। আঙুলের ছাপ তুলে নিচ্ছে। আর সেখান থেকে আধার কার্ডের যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাচ্ছে।” কলকাতা পুলিশের সাইবার ইন্সপেক্টর মহমুদ আসাদুল্লাহ খান বলেছেন, “মাই আধার নামে গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপ রয়েছে। ওর ভিতরে ঢুকে আধার অথেন্টিকেসন করার পর বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেসন লক করা যেতে পারে।”
প্রতারণার এই নজির দেখে পেনশনভোগী প্রবীণের প্রশ্ন, সব কিছুতে আধার লিঙ্কের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। আধার লিঙ্ক থেকে যদি টাকা মার যায় তাহলে নিরাপত্তা কোথায়!