কলকাতা: কী বিচিত্র এই পৃথিবী! কে কখন কার খাদ্য হয়ে যায়, কিছুই বলা যায় না। প্রকৃতি কখনও কখনও অদ্ভুত খেলা খেলে। তা বলে খাদ্য খাদক সম্পর্কও বদলে যায়! ব্যাঙ সাপের খাদ্য। কিন্তু ব্যাঙে সাপ খাচ্ছে এ ঘটনা বিরল। আর বানভাসি হুগলিতে দেখা গেল সেই বিরল দৃশ্য। ঘটনা দেখে কার্যত চক্ষু ছানাবড়া হয়ে গেল দুই প্রত্যক্ষদর্শীর।
এ বছর ভয়াবহ বন্যায় ভেসেছে আরামবাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। যার মধ্যে রয়েছে খানাকুল। সেখানেই দেখা গেল এক চাঞ্চল্যকর দৃশ্য। খানাকুল অঞ্চলের উত্তরের বাঁধে গত ৪ অক্টোবর জনৈক কৃশানু দাস ও সবুজ ধাড়া অদ্ভুত কিছু শব্দ পেয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। তার পর তাঁরা যা দেখেন তাতে কার্যত চোখ কপালে ওঠে। তাঁরা দেখেন, একটি বুল ফ্রগ কালাচ সাপ খাচ্ছে! এ কেমন ব্যাপার! তৎক্ষণাৎ ওই দুই পরিবেশ প্রেমী এই দৃশ্যের ছবি মোবাইল ফোনের ক্যামেরাবন্দি করেন। সেখান থেকে কার্যত ভাইরাল ব্যাঙের সাপ খাওয়ার দৃশ্য।
বেঁচে থাকার জন্য সাপের অন্যতম খাদ্যবস্তু ব্যাঙ। সাপে ব্যাঙ খায়, আশৈশব এমনটাই সবাই জেনে এসেছেন। কিন্তু এ তো উলট পুরাণ! মানে, আস্ত সাপকে গিলে খেল ব্যাঙ। গল্পকথা নয়, বাস্তবে ঠিক এমনটাই ঘটল আরামবাগে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা একে একেবারেই অবিশ্বাস্য ঘটনা বলে মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ায় এমন ছবি হামেশাই প্রকাশ্যে এসেছে। কিছুদিন আগে এমন একটা ভিডিয়ো তে অস্ট্রেলিয়ায় থেকে ভাইরালও হয়েছিল।
হুগলির বিশাল সাঁতরা নামে এক সর্পবিশারদের কথায়, “এমন ঘটনার কথা বা দৃশ্য মাঝেমাঝে আমরা শুনি বা দেখি এবং ভাবি এটা বিরল ঘটনা। কিন্তু মোটেই বিরল ঘটনা নয়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা কিন্তু আমি, আপনি সচারচর এমন দৃশ্য দেখিনা বলেই আশ্চর্যের মনে হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বর্ষার দিনে সাপ বা ব্যাঙের খাদ্যাভাস কী আমরা কিন্তু তা দেখিনা। বর্ষায়, রাতের অন্ধকারে একটা ব্যাঙ কী খাচ্ছে আমরা কি কেউ দেখি? দেখি না। তবে খানাকুলে যাঁরা এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে পেরেছেন, তাঁরা লাকি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হয়ে থাকল।”
এই সর্পবিশারদ তার পর বাস্তুতন্ত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এর দ্বারা সাধারণ মানুষকে বোঝানো যাবে আমাদের পরিবেশে কেন ব্যাঙ থাকা দরকার। বা অন্যান্য জীবও যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটাও বোঝানো যাবে।
পাশাপাশি, ব্যাঙের সাপ খাওয়ার দৃশ্যের সম্ভাব্য কারণ বলতে গিয়ে তিনি যোগ করেন, এখন গ্রামাঞ্চলের জমি জমায় ঘাস মারার জন্য একটা কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এদিকে এগুলো ছড়িয়ে পড়ে খানাখন্দ, জলাশয়ে। ব্যাঙের চামড়াতে এগুলো প্রভাব করে। এর ফলে বায়ো ম্যাগনেটিফিকেশনের সম্ভাবনা থাকে।
তিনি বলেন, “আমি নিজে সোনা ব্যাঙকে গোখরো সাপের বাচ্চা খেতে দেখেছি। প্রাকৃতিক ইতিহাসে এমন উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ল্যাবরেটরি কিংবা কেতাবী শিক্ষার বাইরেও যে ন্যাচারাল হিস্ট্রি কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এই ঘটনা থেকেই প্রমাণিত। তাই গবেষণামূলক কাজে এমন প্রাকৃতিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ।”
আরও পড়ুন: Leopard in Jhargram: চিড়িয়াখানা থেকে পগার পাড় চিতাবাঘ! দরজায় খিল এঁটেছে গোটা শহর