কলকাতা: করোনা আবহে চলে গিয়েছে চাকরি। অথচ পাননি প্রাপ্য বকেয়া টাকাও। দেড় বছর পর খোলার প্রথম দিনই জিডি বিড়লা স্কুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীরা। হাতে ব্যানার, পোস্টার। তাতে লেখা, ‘স্কুলের ফিজ় না পাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আমাদের পাওনা টাকা আটকানো যাবে না’, ‘আমাদের সুবিচার চাই।’
বিক্ষোভরত স্কুলেরই এক প্রাক্তন শিক্ষিকার কথায়, “অতিমারি পরিস্থিতিতে কোনও কারণ না দেখিয়ে রাতারাতি নোটিস দিয়ে আমাদের বরখাস্ত করা হয়েছিল। তারপর আমাদের চিঠি হাতে পাই। আমি ক্লাস করাচ্ছিলাম। তখনই হাতে টার্মিনেশন লেটার পাই।’
বিক্ষোভরত কর্মীদের বক্তব্য, ‘আমাদের বক্তব্য আমাদের প্রাপ্য যা টাকা তা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’ প্রায় দেড় বছর পর স্কুল খুলল বাংলায়। কিন্তু রাজ্যের অনান্য স্কুলগুলোর মতো এদিন সকালে জিডি বিড়লার চিত্রটা ধরা পড়ল অন্য। এখনও পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
করোনা আবহে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে চাকরি হারা হন অশোকা হল গ্রুপ অফ স্কুলসের ১১০ জন। যেখানে শিক্ষাকর্মী, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী থেকে প্রত্যেকে ছিলেন। ২০-৩০ বছর যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদেরও বরখাস্ত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাঁরা না পেয়েছেন পাওনা টাকা, না পেয়েছেন নোটিস পিরিয়ড। আজ জিডি বিড়লায় পুনরায় কাজ ও বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা।
প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ স্কুল। এত দিন অনলাইনে ক্লাস হচ্ছিল। এ বার সশরীরে ক্লাস করতে পারবে পড়ুয়ারা। অতিমারির প্রকোপ কিছুটা কমতেই ফের স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। কিন্তু স্কুল খোলার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি কতটা কার্যকর হয়েছে, তা বোঝা যাবে স্কুল খোলার পরেই।
দেড়বছর পর তালামুক্ত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি। স্কুল-মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। স্কুল খোলার বিষয়ে আপাতত হস্তক্ষেপ করতে নারাজ হাইকোর্ট।
স্কুল খোলা নিয়ে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার নিজেরই ইচ্ছা করছে স্কুল খুলে যাই। স্কুল খুলছে শুনে বাচ্চারা এতটাই উত্ফুল্ল, এতটাই আনন্দ, দেখেই আমার ভাল লাগছে। একেবারে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো এখনই যুক্তিযুক্ত হবে বলে মনে করছে না সরকার। কিন্তু স্কুল খুলবে বলে তারা আশায় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে আস্তে আস্তে। দুবছর পর যখন বাচ্চাগুলোর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হল, তখন তারা প্রত্যেকেই অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে।” স্কুল খোলার বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গেও তিনি একমত বলে জানান।
করোনার বিষয়ে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের সতর্ক করার দায়িত্বও স্কুলকেই দিয়েছে রাজ্য। করোনা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ‘ডু অ্যান্ড ডোন্টস’-এরও একটি তালিকা রয়েছে বিকাশ ভবনের স্কুল রিওপেন বুকলেটে। সেখানে বলা হয়েছে, জ্বর হলে কোনও অভিভাবক যেন পড়ুয়াকে স্কুলে না পাঠান। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তবে অতিমারির কোপ থেকে কী ভাবে পড়ুয়াদের দূরে রাখা যাবে সে বিষয়টিও তাঁদের নজরে।
আরও পড়ুন: বিএসএফের এলাকাবৃদ্ধি আদতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত, প্রস্তাব আসতে চলেছে বিধানসভায়