কলকাতা : কোভিড পরিস্থিতিতে মেলা নিয়ে আগেও সতর্ক করেছেন রাজ্যের চিকিৎসকেরা। সব পক্ষের শুনানির পর শর্ত সাপেক্ষে মেলা করার অনুমতি দিয়েছে আদালত। সেই মতো মেলার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে ফের সেই মেলা বন্ধ করার আর্জি জানালেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, এখনও যদি না বন্ধ হয়, তাহলে রাজ্য বিপদসীমায় পোঁছে যাবে। সোমবার গঙ্গাসাগর মেলা সংক্রান্ত একাধিক মামলার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বেঞ্চে এ দিন আর্জি জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ দিন মামলার শুনানি শেষের পর রায়দান স্থগিত রাখল আদালত।
আদালতের নির্দেশে যখন মেলার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে, তার মধ্যেই আরও একবার মেলা বন্ধের আর্জি জানালেন চিকিৎসকেরা। এ দিন চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্য়ায় আদালতে জানান, ইতিমধ্যেই ৫৩ শতাংশ সংক্রমন হয়েছে। তিনি অনুরোধ করেন আদালত যাতে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে গোটা মেলা বন্ধ করে দেয়।
চিকিৎসকের দাবি, এখনও যদি না মেলা বন্ধ হয়, তাহলে রাজ্য বিপদসীমায় পোঁছে যাবে। মাস্ক পরার কথা বললেও মানা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তাঁরা। উল্লেখ করেন, মানুষজন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করছেন, ট্রেন বাসে যাচ্ছেন। আদালতে তাঁদের প্রশ্ন সংক্রমণ বাড়লে ‘কে দায়িত্ব নেবে? সরকারের ইনটেনশন কি?’ তাঁরা জানান, চিকিৎসকদের কোনও আগ্রহ নেই কমিটিতে থাকার। তাঁরা শুধুই সাধারণ মানুষের জন্য ভাবিত।
মামলাকারীরা এ দিন জানান, গঙ্গাসাগরে কোনও নিয়ন্ত্রক এন্ট্রি গেট নেই। আরটি-পিসিআর টেস্ট যাতে বাধ্যতামূলক করা হয় গোটা এলাকায়, সেই আর্জিও জানানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি অ্যাডভোকেট জেনারেলকে জিজ্ঞেস করেন, কেন কোভিড বিধি পালন হয়নি? উত্তরে এজি জানান, তাঁরা হলফনামায় জানিয়েছিলেন দু কিলোমিটার এলাকায় মেলা হবে। অন্যদিকে, সাগর দ্বীপ অনেক বিস্তীর্ণ, একাধিক দ্বীপের সমাহার।
বিচারপতি জানতে চান, পূণ্যার্থীরা মূলত কোথায় যান? এজি বলেন কপিল মূনির আশ্রমে যান। তারপর তারা স্নানে যান। ফের বিচারপতি বলেন, মূলত কোথায় যান কপিল মুনির আশ্রম ছাড়া? এজি বলেন, ‘তাঁরা ডায়মন্ড হারবারেও যেতে পারেন। তাই বলে গোটা ডায়মন্ডহারবার কি নোটিফাই করতে হবে? কিসের অবমাননা?’
রাজ্যের তরফে গঙ্গা সাগর মেলার জন্য যে নতুন কমিটি তৈরি হয়েছে, তা পুনর্গঠন করার আবেদন জানানো হয়েছিল। রাজ্যের তরফে এজি প্রশ্ন তোলেন, স্বাধীন কমিটি করতে চিকিৎসকদের যদি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে শুভেন্দু অধিকারী কেন থাকবেন কমিটিতে? সেই প্রশ্ন তুলে এজি বলেন, ‘চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতো মানুষের থাকা দরকার।’
এরপরও বিচারপতি বলেন, ‘এখন যে সংক্রমণ চলছে সেটা কি অস্বীকার করেন? রাজ্যের কি উচিৎ নয় আরও সঠিক পদ্ধতিতে মেলার আয়োজন করা?’ এজি জানান, আরটিপিসিআর টেস্ট করছে রাজ্য।
মামলাকারী কবিরুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশনের কোনও চেয়ারম্যান নেই। কমিটিতে চিকিৎসকদের থাকা প্রয়োজন। ভাইরোলজিস্ট প্রয়োজন। অমিতাভ নন্দী, অভিজিৎ চৌধুরী এরা স্পেশালিষ্ট।’ এজি জানান, এনজিও যারা এই মেলার সঙ্গে সব সময় যুক্ত থাকে, যেমন ভারত সেবাশ্রমকে রাখতে হবে।
মামলাকারী অজয় কুমার দের হয়ে আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের দাবি, চিকিৎসকেরা না থাকলে কমিটি পাবলিক হেলথ নিয়ে কাজ কী ভাবে করবে। তিনি মানস গুমটা, সুব্রত গোস্বামীর নাম প্রস্তাব করেন। চিকিৎসক ছাড়া আর কারও থাকার দরকার নেই বলেও জানান।
অন্য মামলাকারী পুষ্পক চক্রবর্তীর দাবি, কমিটির কোনও সদস্যই এমন নেই যিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন। ভাইরোলজিস্টদের থাকা উচিৎ।
রিজু ঘোষালের আইনজীবীর দাবি, এই ধরণের কমিটিতে কুণাল সরকারের মতো চিকিৎসকদের রাখা প্রয়োজন।
মূল মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তীর বক্তব্য, রায় নিয়ে তাঁরা আদালত অবমাননার উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, গঙ্গাসাগর মেলা গ্রাউন্ড নোটিফায়েড এরিয়া হলেও গোটা গঙ্গাসাগর দ্বীপ নোটিফায়েড এরিয়া করা হয়নি। আইএএস অফিসার ওখানে কপিল মুণির আশ্রমকে নোটিফায়েড বলে ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরা কোর্টে এ দিন কাছে ছবি দিয়ে দেখান ৫০ হাজারের বেশি মানুষের জমায়েত হয়েছেন। বিচারপতি মেলা গ্রাউন্ড ও গোটা দ্বীপের পার্থক্য জানতে চান এ দিন।
আরও পড়ুন: Covid Spike: সংক্রমণ বাড়ছে জেলাগুলিতেও, আজই স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যসচিব